সাভারে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে ১৬ আহত হয়। সেই ভবন নির্মাণে রাজউক বা স্থাপত্য অধিদপ্তর কারও কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি বলে জানা যায়। নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নকশা তৈরি করে পরমাণু শক্তি কমিশন ভবনটি নির্মাণ করছিল।
অন্যদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান মনে করেন, ভবনটির নির্মাণকাজেও গাফিলতি ছিল। গতকাল শনিবার ভবনটি পরিদর্শন করে একথা বলেন তিনি। তাঁর মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন।
ভবনটি পরিদর্শন শেষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, পুরোটা দেখে বোঝা যাচ্ছে, কিছুটা গাফিলতি আছে। এখন সিদ্ধান্ত হয়েছে, ঠিকাদার ধসে যাওয়া অংশে নতুন করে কাজ করবে। পরবর্তী কাজগুলো যাতে ঠিকমতো হয় এবং এ ধরনের অঘটন যেন আর না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কারও দায় থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত কমিটি করা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘আমরা সবকিছু দেখলাম। তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি আরও খতিয়ে দেখা হবে। এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ভবন।’
সরকারি কোনো সংস্থার অনুমোদন না নিয়ে যেভাবে ভবন নির্মাণ করছে, তা অত্যন্ত খারাপ দৃষ্টান্ত বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সভাপতি মোহাম্মদ ফজলে রেজা। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে আইন না মানতে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।
পরমাণু শক্তি কমিশনের নির্মাণাধীন ভবনটির অবস্থান সাভারের গণকবাড়ী এলাকায়। এলাকাটি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অঞ্চল-১–এর আওতাধীন এবং সংস্থাটির প্রণয়ন করা ঢাকা মহানগর এলাকার বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনার (ড্যাপ) অন্তর্ভুক্ত। প্রচলিত ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে, ড্যাপে অন্তর্ভুক্ত কোনো এলাকায় যেকোনো ধরনের ভবন নির্মাণ করতে হলে রাজউক থেকে অনুমোদন নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে।
রাজউকের বিকল্প হিসেবে ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়ার এখতিয়ার রাখে কেবল স্থাপত্য অধিদপ্তরের।
নির্মাণাধীন ভবনটির ছাদ ধসের পর রাজউক ও স্থাপত্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাভারের ওই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে তাঁদের কাছ থেকে কোনো ধরনের অনুমোদন বা মতামত নেওয়া হয়নি। নিজেদের নিজস্ব পরামর্শকের মাধ্যমে নকশার কাজটি করেছে পরমাণু শক্তি গবেষণা কমিশন।
বিষয়টিকে নিয়মের ব্যত্যয় উল্লেখ করে স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি মীর মনজুরুর রহমান বলেন, পরামর্শক দিয়ে কাজ করলেও পরমাণু শক্তি গবেষণা কমিশনের উচিত ছিল স্থাপত্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে যাচাই করে নেওয়া। কিন্তু সেটিও করা হয়নি।
এদিকে রাজউকের সংশ্লিষ্ট এলাকার অথরাইজড অফিসার মেহেদী হাসান খান একটি দৈনিক গণমাধ্যমকে বলেন, ভবনটি নির্মাণে রাজউকের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। রোববার (আজ) তাঁরা ভবনটি পরিদর্শনে যাবেন।
পরমাণু শক্তি কমিশনের ভবনটি নির্মাণের এই প্রকল্পের পরিচালক ও কমিশনের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুর আহসান বলেন, ‘বেজমেন্টসহ ১০ তলা ভবনের অনুমোদন আছে। আমাদের আলাদা পরামর্শক আছেন, তাঁরা এটা করেছেন। স্থাপত্য অধিদপ্তরের অভিজ্ঞরা কমিটির মধ্যে আছেন। এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েটের অভিজ্ঞ অনেকেই আছেন। আমাদের প্রকৌশলীরা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন, তবে কাজ মূলত করেন শ্রমিকেরা।’