শারজাহ থেকে কাবুল, করাচি, দিল্লী কিংবা ঢাকা… সম্ভবত কেউই বিশ্বাস করতে পারেনি, পাকিস্তান এভাবে ম্যাচ বের করে আনতে পারবে। দুই বল দুই ছয়। বোলার ফজলে ফারুকি তখন কাঁদবেন নাকি বিষ্মিত হবেন, নিজেও জানেন না। আফগানিস্তান হারলো, তবে জয় করলো অনেক কিছুই। ম্যাচ শেষে তাই বলতেই হয়, মাথা উঁচু রাখো আফগানিস্তান!
ঠিক যে কারণে গতকাল নাসিম শাহ অমন ব্যাটার হলেন, ঠিক ওই কারণেই আনকোরা দল নিয়েও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেটে সবসময় ফেভারিট! ঠিক এই কারণেই ভিরাট কোহলি এখনও ভারতের ক্রিকেটে আস্থা। আচমকা নাসিম শাহ হয়ে উঠলেন নিখুঁত ব্যাটার। প্রায় বেরিয়ে যাওয়া ম্যাচটা ঘুরে গেলো দশ নাম্বারে নামা এক কৈশোর পেরুনো খেলোয়াড়ের হাতে!
আফগানিস্তান ম্যাচ হারলো কোথায়? উত্তরে যদি বলেন, নাসিম শাহ ক্যামিও, উত্তর সঠিক বটে, তবে পুরোপুরি না। যদি বলেন, শাদাবের দারুণ ইনিংস! টার্নিং পয়েন্ট, তবে সঠিক উত্তর না। আফগানিস্তান ম্যাচ হারলো মূলত নিজেদের ব্যাটিং ইনিংসে। শুধু পাকিস্তানের সাথে ম্যাচেই না। বরং শ্রীলঙ্কা ম্যাচেও একই জায়গায় আটকেছিলো জোনাথন ট্রটের শিষ্যরা।
পাকিস্তানে আছেন আসিফ আলি, খুশদিল শাহ, মোহাম্মদ নাওয়াজ। শ্রীলঙ্কার জন্য ভানুকা রাজাপাকসে, দাশুন শানাকা। ভারতে হার্ডিক পান্ডিয়া, ঋষভ পান্ত কিংবা দীনেশ কার্তিক। আফগানিস্তানে? শুধুই নাজিবুল্লাহ জাদরান।
এখানেই বড় শুন্যতা। মোহাম্মদ নবী ব্যাট হাতে জৌলুশ হারিয়েছেন। রশিদ খানের ব্যাটিং চলনসই হলেও সবসময় তা ক্লিক করেনি। মাত্র ১১ গড় সেটারই ইঙ্গিত দেয়। ফিনিশার রোলে আছেন একজনই। নাজিবুল্লাহ জাদরান। শ্রীলঙ্কার সাথে নাজিবুল্লাহর উইকেট পতনের পর শেষ ৫ ওভারে উঠেছে কেবল ৩৭ রান। টি-টোয়েন্টি যুগে যা খুবই বেমানান। একই দশা পাকিস্তানের সাথেও। শেষ দশ ওভারে রান ৫৭। আরেকটু স্পষ্ট করলে শেষ ৬ ওভারে ৩৮ রান।
বোলিংয়ে আসা যাক। ফজল হক ফারুকি নিজের তৃতীয় ওভারেও দারুণ বল করেছেন। খুশদিল শাহ আর মোহাম্মদ নাওয়াজ দুজনেই ফিরেছেন তার দারুণ স্পেলে। শেষ ওভারে ইয়র্কার লেন্থে বল রাখতে গিয়েই হলো গন্ডগোল! রবি শাস্ত্রীর কাছে নাসিম শাহ সহজেই বলেছিলেন, ফিল্ডার কাছাকাছি আসতেই তার অনুমান ছিলো ইয়র্কার লেন্থে বল।আসবে। চরম চাপের ওই সময়ে এই গেইম রিডেই ফারুকি করলেন বড় ভুল। আগের ওভারে স্লোয়ার আর অফ কাটারে সাফল্য এলেও কেন ইয়র্কার!
কারণ বোঝা সহজ। নিজের স্বভাবজাত বোলিং এর চাইতে ক্রিকেটীয় মৌলিকতায় ভরসা রেখেছেন তিনি। তবে, শারজায় চেতন শর্মা পারেননি জাভেদ মিঁয়াদাদের বিপক্ষে। ৩৬ বছর আগে এই শারজাহ স্টেডিয়ামে ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শেষ বলে ছয় খেয়ে ম্যাচ হেরেছিলেন চেতন শর্মা। অনেকটা দিন পর ফারুকিরও হয়নি নাসিম শাহের বিপক্ষে!
বোলিং ইউনিট আফগানদের বেশ শক্ত। তবে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেও চাপ সামলানো যায়নি। ভানুকা রাজাপাকসে ম্যাচটা ছিনিয়ে এনেছিলেন। অথচ, উদ্বোধনী ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে আটকে দিয়ে অনায়াস জয় পেয়েছিলো আফগানরা। এতটুকু স্পষ্ট, ব্যাটে আর বলে ডেথ ওভারেই কেবল ম্যাচ হারছে আফগানিস্তান।
লেখার শুরুতে বলা হয়েছিলো, মাথা উঁচু রাখো আফগানিস্তান! ২০১৩ সালে সহযোগী দেশের মর্যাদা পেয়েছে আফগানিস্তান। নওরোজ মঙ্গল, শাপুর জাদরান, মোহাম্মদ নবীরা তখন নিজেরাই আনকোরা। আর মাত্র ৯ বছরের ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আফগানিস্তানের দিকে চোখ তুলে তাকাতে সমীহ করতেই হয়।
রশিদ খান, রহমতউল্লাহ গুরবাজ, মুজিব, নাজিবুল্লাহ জাদরান… আফগানিস্তানের তরুণ ক্রিকেটাররা এখনই অনেক পরিণত! ৬ টেস্টের মাঝে ৩ জয়! ১৩৮ ওয়ানডে ম্যাচে ৬৯ জয় আর ১০৩ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে জয় ৬৮ টিতে। বাংলাদেশের মতো দলকেও বলে-কয়ে হারানো আফগানিস্তানের জন্য এখন কঠিন কিছুই নয়।
জাতি হিসেবেই অবশ্য আফগানিস্তান অনন্য। পাহাড়, রুক্ষ জমি, বিদেশী শত্রুর হানা, গোলা বারুদের শব্দ রশিদ খানদের বড় করেছে অন্য এক আবহে! এই দলটার মাঝেও সেই অসীম তেজ চোখে পড়ে হরহামেশাই! ম্যাচটার ফলাফল হয়ত বলছে আফগানিস্তানের পরাজয়। কিন্তু, ক্রীড়াজগতে ‘পিপলস চ্যাম্পিয়ন’ নামেও একটা শব্দ আছে। সেই পিপলস চ্যাম্প এই এশিয়া কাপে হয়ত আফগানিস্তানই! অতএব, কিপ ইওর হেড হাই আফগানিস্তান ক্রিকেট!