অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতির কোনো মূল্য নেই মন্তব্য করে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন এই দুটি সংগঠন আমাদের দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।
তিনি বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের জন্য বিবৃতি দেয়। ফিলিস্তিনে শিশুরা পাথর ছুড়লে ইসরাইলি বাহিনী গুলি ছুড়ে পাখি শিকারের মতো শিশুদের হত্যা করে, তাদের বিরুদ্ধে টু শব্দটি করে না। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে বাংলাদেশে মানুষ পোড়ানোর বিরুদ্ধে কিছু বলে না। তাই তাদের বিবৃতির কোনো মূল্য নেই।
আজ শনিবার (২৪ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘গৌরব, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সাফল্যের ৭৪ বছর’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আগামী নির্বাচনকে দেশের ভূমি ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার নির্বাচন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ কি পাকিস্তান হবে, না কি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অভিযাত্রায় আরও দ্রুত বেগে এগিয়ে চলবে, এর ফয়সালা হওয়ার নির্বাচন। এই দেশে তাঁবেদারি সরকার বসবে, না কি যারা দেশের সার্বভৌমত্ব বিকিয়ে দেবে তারা বসবে, না কি স্বাধীনচেতা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার থাকবে এর ফয়সালা হওয়ার নির্বাচন।
তিনি বলেন, আজকে পত্রিকায় দেখলাম অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল একটা বিবৃতি দিয়েছে। আমাদের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে যারা র্যাবে কাজ করবে কিংবা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাদের যেন স্ক্রিনিং করা হয় এবং শান্তিরক্ষী বাহিনীতে না নেওয়া হয়।
হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা অ্যামনেস্টিকে চিনি, তারেক রহমানের বেয়াইন আইরিন খান অ্যামনেস্টির জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। এখনো অ্যামনেস্টির সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি তারেক রহমানের বউয়ের চাচাতো বোন। এই অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল যুদ্ধাপরাধীদের যখন বিচার শুরু হলো, তখন বিচার বন্ধ করার জন্য বিবৃতি দিয়েছিল। ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছিল তখন তার বিরুদ্ধে কোনো বিবৃতি দেয়নি। আরেকটা সংগঠন আছে- হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। ওনারাও মাঝে মধ্যে বিবৃতি দেয়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতির কোনো মূল্য নেই উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ- এগুলোর বিবৃতি কীভাবে হয়, কোথায় ড্রাফট হয়, আর কিসের বিনিময়ে হয় সেটা আমরা জানি। যারা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য বিবৃতি দেয়, ফিলিস্তিনে পাখি শিকারের মতো যেভাবে মানুষ শিকার করা হয় তখন ইসরাইলের বিপক্ষে কোনো বিবৃতি দেয় না, আমাদের এগুলো নিয়ে বিবৃতি দেওয়ার নৈতিক কোনো অধিকার তাদের নেই। আমাদের দেশের কিছু পত্রপত্রিকা সেগুলোকে বড় করে ছাপায়। এসব বিবৃতিতে বিভ্রান্ত হওয়ার দরকার নাই
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে চলছে, তখন আজকে আবার দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক অপশক্তি এক হওয়ার চেষ্টা করছে। দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। সেই কারণে আজকে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ থেকে দেশের বিরুদ্ধে লবিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। সেই লবিস্টের পেছনে মিলিয়ন বিলিয়ন ডলার খরচ করে কয়েকটা বিবৃতি আর কিছু কিছু কংগ্রেসম্যান কিংবা ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট মেম্বারের চিঠি ক্রয় করা হয় দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের মেম্বার হচ্ছে ৭০৫ জন। এরমধ্যে মাত্র পাঁচজন বাংলাদেশের ব্যাপারে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের ফরেন অ্যাফেয়ার্স কমিটির চেয়ারের কাছে চিঠি দিয়েছে। যার কোনো মূল্য নাই। অথচ আমাদের দেশকেও চিঠি দেয় নাই তারা। এটা নিয়ে কি যে মাতামাতি, পত্রিকায় কত সংবাদ! এতে পুলকিত মির্জা ফখরুল দেখি দুই ইঞ্চি লাফ দেয়।
তিনি আরও বলেন, আপনাদের মনে আছে ২০০২ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায়, তখন বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট সর্বসম্মতিক্রমে রেজুলেশন পাস করেছিল যে- বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে। আওয়ামী লীগসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর নিপীড়ন হচ্ছে। তখন সাতশ’র বেশি পার্লামেন্ট মেম্বার ছিল। এখন ৭০৫ জনের মধ্যে মাত্র পাঁচজন একটা চিঠি দিয়েছে। এগুলোতে ওনাদের কি লেগেছে জানি না, সম্ভবত কাতুকুতু লেগেছে।
হাছান মাহমুদ আরো বলেন, নির্বাচন সমাগত, এই নির্বাচন আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এই নির্বাচনে ফয়সালা হবে দেশে কি হামিদ কারজাই মার্কা তাঁবেদারি সরকার হবে না কি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বিএনপি-জামায়াত। সুতরাং আগামী নির্বাচন সম্পর্কে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। দল সাড়ে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায়। সাড়ে ১৪ বছর আগের চিত্র আর আজকের চিত্র মানুষের সামনে তুলে ধরুন, সেই উন্নয়নের চিত্রগুলোই ফেসবুকসহ সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।
আলোচনা সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন– চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ আতাউর রহমান, সহ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক মঈনুদ্দীন, এটিএম পেয়ারুল ইসলাম, আবুল কালাম আজাদ, আফতাব উদ্দিন চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদিকা খাদিজাতুল আনোয়ার সনি।