বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ হচ্ছে সেই দল যারা অন্য কাউকে সহ্য করতে পারে না। তারা মানুষের কথা বলাও সহ্য করতে পারে না, তাদের বিরুদ্ধে কেউ ভোট দিক সেটাও সহ্য করতে পারে না। তারা মনে করে এটা বাপের তালুকদারি, জমিদারি।
তিনি বলেন, অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে। তাই কাল বিলম্ব না করে নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। তরুণরা জেগে উঠুন, সরকারের পতনকে ত্বরান্বিত করতে হবে।
শনিবার (২২ জুলাই) বিকেলে রাজধানী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। বিএনপির তিন সংগঠন যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের যৌথ উদ্যোগে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সরকার বিচারপতি খায়রুল সাহেবকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিচারপতি খায়রুল সাহেবকে ব্যবহার করে কোর্টে ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে আওয়ামী লীগ। কারণ, সুষ্ঠু ভোট হলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। এজন্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এরা নাকি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী?
আওয়ামী লীগ ভয় পায় বলে ক্ষমতা ছাড়তে চায় না উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার নির্বাচনে ভয় পায়। আমরা নির্বাচন চাই এ মুহূর্তে, কিন্তু তোমাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) অধীনে নয়। নির্বাচন হবে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২০১৪ সালে ভোটই হয়নি, আর ২০১৮ সালে রাতে ভোট হয় গেছে। এবারের ভোটের আলামত ঢাকা-১৭ আসনের উপ-নির্বাচনে দেখেছি। বেচারা হিরো আলম, আমি খুব কষ্ট পেয়েছি, সে একটা আশা নিয়ে গিয়েছিল অন্তত তাকে ভোটটা করতে দেবে। এটার নাম যে আওয়ামী লীগ সেটা সে (হিরো আলম) বোঝতে পারেনি।
বিএনপি যেন নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সে জন্য সরকার একটার পর একটা মামলা দিয়ে যাচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৪টি মিথ্যা মামলা দিয়েছে। বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে সাড়ে তিনশ মামলা আছে। কেন এতো মামলা দেন? কারণ তারা ভয় পায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বিদেশিদের বলছেন, সংবিধানের অধীনে এবার খুব ভালো নির্বাচন হবে। আর এদিকে কী করছেন? বিএনপির যারা নির্বাচন করবে তাদের নামে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছেন। যেন নির্বাচনের আগে মাঠে না থাকতে পারে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ নতুন কৌশল নিয়েছে। সেই কৌশল কী? আমাদের সিনিয়র নেতা, যারা নির্বাচন করতে পারে, জনপ্রিয় নেতা, তাদের মামলাগুলোকে শেষ করে দ্রুত সাজা দেওয়া হচ্ছে। আমাদের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাছান মাহমুদ টুকু ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহকে সাজা দিয়েছে। এই অপকৌশল দেশের মানুষ সহ্য করবে? এই সরকারের অধীনে কি নির্বাচনে যাওয়া যাবে? দেশের মানুষ কি নিরাপদ? তখন সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীরা না সূচক উত্তর দেন।
বিচার-বহির্ভূত হত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য আমেরিকা র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু এখনও তারা সেই কাজগুলো করে যাচ্ছে। কয়েকদিন আগে আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এক নেতাকে তুলে নিয়ে গেছে। ২৪ ঘণ্টা পর চোখে কালো কাপড় বেঁধে ফেলে রেখে যায়। লক্ষ্য একটা, ভয় দেখিয়ে ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা।
ফখরুল বলেন, এবার দেশে কোনো নির্বাচন হবে না, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া। সে জন্য শুধু বিএনপি নয়, ৩৬টি দল দাবি উত্থাপন করেছে। সব রাজনৈতিক দল বলতে শুরু করেছে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি বলছে, এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। চরমোনাই দল ইসলামী আন্দোলনও একই কথা।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আজকের সমাবেশ একটি বিরল সমাবেশ, ব্যতিক্রমী সমাবেশ। এই সমাবেশের মাধ্যমে তরুণরা জেগে উঠেছে।
‘সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, কেউ কি চাকরি পেয়েছে?’ ফখরুলের এমন প্রশ্নের উত্তরে নেতাকর্মীরা নেতিবাচক উত্তর দেয়। তখন তিনি বলেন, ‘চাকরি পায় তারা, যারা ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে পারে, যারা আওয়ামী লীগ করে।’
এ সময় ডেঙ্গু চিকিৎসার বেহাল অবস্থা জন্য সরকারকে দায়ী করে ফখরুল বলেন, এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। অথচ মানুষের পকেট থেকে টাকা কাটতে ব্যস্ত তারা।’
যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানি, ছাত্রদলের সভাপতি রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।
সমাবেশে সঞ্চালনা করেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিলটন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সাইফ মাহমুদ জুয়েল।