আওয়ামী লীগ সরকারের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুর্নীতি বলে দাবি করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ প্রতিদিন শত শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করছে। ব্যাংকিং খাতকে লুট করে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে টুকরা টুকরা করে দিচ্ছে। রিজার্ভ থেকে ৮০০ কোটি টাকা লুট হয়ে গেছে। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের মূলনীতিই হলো টাকা পাচার আর দুর্নীতি।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে ‘সরকারের সর্বগ্রাসী দুনীতির প্রতিবাদে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের ১০ দফা দাবিতে’ এক প্রতিবাদ সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘ভারতে একটা সরকার নির্বাচনে হেরে গিয়েছিল মাত্র একটি স্লোগানে। সেটি হচ্ছে, অলিগলিমে শোর হ্যায়, অমুক নেতা চোর হায়। আমি তাঁর নাম বললাম না। আজকে একসঙ্গে আওয়াজ তুলতে হবে আওয়ামী লীগের মূলনীতি, টাকা পাচার আর দুনীতি। গলি গলি মে শোর হ্যায়, আওয়ামী লীগ চোর হ্যায়।’
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ দেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। তাই এ দেশকে সংস্কার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যেমন এ দেশকে স্বাধীন করা হয়েছিল, তেমনি নতুন করে এর সংস্কার করতে হবে। সেজন্য আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে হবে। এরপর ১০ দফার আন্দোলনের মাধ্যমে নতুনভাবে দেশকে ঢেলে সাজাতে হবে।
তিনি আরো বলেন, দেশের যে সেক্টরে যাবেন, সেখানেই দুর্নীতি। ইউনিয়ন পরিষদ কি আদালত, সবখানেই দুর্নীতি। দুর্নীতি থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বাদ যায়নি। সেখানেও ঘুষ দিতে হয়। একজন পিয়নের চাকরি জন্য লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়। কারণ এ সরকার জনগণের সরকার নয়। তারা ভোটচুরি করে ক্ষমতায় এসেছে। দেশের আদালত প্রাঙ্গণেও এ সরকার ভোটচুরির রূপ দেখিয়েছে।
এ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, বিএনপি চুরি করে ক্ষমতায় যেতে চায় না। জনগণের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। তাই এ সরকার জনগণের আন্দোলনের সরে যেতে বাধ্য হবে।
এসময় ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান বলেন, আওয়ামী লীগের পরিচয় এখন ভোটচোর। আদালতেও তারা এখন ভোটচুরি করে। সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলে দিতে চাই, আগামীতে আর ভোটচুরি করে ক্ষমতায় আসা যাবে না। সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরে যেতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিতে হবে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদিন ফারুক বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আমরা নির্বাচনে যাব না। আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে ফায়সালা করা হবে।
বিএনপির আন্তর্জাতিকবিষয়ক কমিটির সদস্য ইশরাক হোসেন বলেছেন, এই সরকার পরিকল্পনা করেছে, রমজানের পর আমাদের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করবেন। ঈদের পর আমাদের মাঠে নামতে দেবে না।
বর্তমান সরকারের পদত্যাগ, নেতাকর্মীদের হত্যার প্রতিবাদ, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা, বিদ্যুতসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য কমানো এবং বেগম খালেদা জিয়াসহ রাজবন্দীদের মুক্তির দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকার দুই মহানগর বিএনপি।
প্রতিবাদ সমাবেশে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু।
প্রতিবাদ সমাবেশে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপাসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আমান উল্লাহ আমান, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম বকুল, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, মহিলা দলের সভানেত্রী মির্জা আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু প্রমুখ।
এছাড়াও যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীতে বিএনপি ছাড়াও পুরানা পল্টন মোড়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজয় নগর পানির ট্যাংকের সামনে ১২ দলীয় জোট, আল-রাজী কমপ্লেক্সের সামনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, আরামবাগে গণফোরাম চত্বরে গণফোরাম-পিপলস পার্টি, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য এবং তেজগাঁওয়ে দলের কার্যালয়ের সামনে এলডিপি আলাদা আলাদা সমাবেশ করেছে।