বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ কর্মসূচিতে যাবে না সিপিবি ও বাসদের নেতৃত্বাধীন বাম গণতান্ত্রিক জোট।সরকারবিরোধী অবস্থান নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট স্বতন্ত্র বা আলাদাভাবে আন্দোলন গড়ে তুলতে চাইছে তাদের সমমনা বাম জোট ও দলগুলোর সঙ্গে। এই আন্দোলনকে তারাও যুগপৎ আন্দোলন হিসেবে উল্লেখ করছে।
জোটের নেতারা বলছেন, বিএনপি ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ—বড় দুই দলের বাইরে তাঁরা একটি বিকল্প অবস্থান তৈরি করতে চাইছেন। সেই চিন্তা থেকে সমমনা জোট ও দলগুলোকে নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে আন্দোলনে নামবে তাঁরা।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১৮ জুলাই বাম গণতান্ত্রিক জোট আত্মপ্রকাশ করেছিল। এই জোটে ছিল বামধারার আটটি রাজনৈতিক দল। দলগুলো হলো বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি (মার্ক্সবাদী) ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন।
এই জোটের লক্ষ্য ছিল, জনগণের ঐক্য গড়ে তোলা এবং আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দ্বিদলীয় বৃত্তের বাইরে বাম গণতান্ত্রিক বিকল্প গড়ে তোলা। কিন্তু চার বছরের মাথায় এই জোটে ভাঙন দেখা দেয়। গণসংহতি আন্দোলন ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি—এই দুই দল আলাদা জোট করে বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেওয়ার কারণে বাম গণতান্ত্রিক জোটে নেই। বর্তমানে এই জোটে আছে ছয়টি দল।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সূত্র জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে তাদের ১০ দফার ভিত্তিতে আন্দোলন জোরদার করতে চায় জোট। তাদের উদ্দেশ্য হলো বর্তমান ‘দুঃশাসন’ হটানো, বর্তমান ব্যবস্থার পরিবর্তন এবং বিকল্প শক্তি গড়ে তোলা। জোটের নেতারা বলছেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে নেই, এ ধরনের যেসব বাম দল রয়েছে, সেগুলোর সঙ্গে তাঁরা যোগাযোগ করছেন। গত জানুয়ারি মাসে বাম গণতান্ত্রিক জোটের দলগুলোর বাইরে বামধারার সাতটি দল মিলে গঠন করেছে ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা। তাদের সঙ্গে বাম গণতান্ত্রিক জোটের আলোচনা চলছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের অন্যতম শরিক সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে ঐক্য ন্যাপ ও বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে জোটের কিছু আলোচনা হয়েছে। সম্প্রতি ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম মোর্চা হয়েছে, তাদের সঙ্গেও কথা চলছে। ছাত্র ও শ্রমিক সংগঠনের সঙ্গেও কথা চলছে। এর বাইরে বাম মানসিকতার যেসব ব্যক্তি আছেন, তাঁদেরও এই উদ্যোগে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করবেন তাঁরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নির্দলীয় তদারকি সরকারের অধীন নির্বাচন, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের দাবি নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট ও শরীফ নুরুল আম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাসদ যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়া নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা করেছিল। তবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি। আলাপ–আলোচনা এখনো চলছে। বাম জোট মূলত বাম দলগুলোকে নিয়ে একটি বিকল্প শক্তি দাঁড় করাতে চায়। তবে বাম ও বামধারার না হলেও কাছাকাছি মানসিকতার গণতান্ত্রিক দলগুলোর সমন্বয়ে একটি বিকল্প শক্তি গড়ার ব্যাপারে মত রয়েছে বাম গণতান্ত্রিক জোটে। জোটে বামধারার বাইরের কোনো দলকে সম্পৃক্ত করার প্রশ্নে কিছুটা মতভিন্নতা আছে। সে জন্য জোট সম্প্রসারণ না করে সমমনাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়টিই গুরুত্ব পাচ্ছে।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক ও বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ বলেন, তাঁরা আপাতত যুগপৎ আন্দোলনে যাওয়ার কথাই ভাবছেন। জোট বড় করার কথা ভাবছেন না। সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা সাত দলের ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম ঐক্য যেটা হয়েছে, তারা বাম গণতান্ত্রিক জোটকে একটি প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, এর আগে ঐক্য ন্যাপ ও বাংলাদেশ জাসদের সঙ্গে এর আগে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। তবে সেটা খুব একটা এগোয়নি। এখন নির্বাচনের সময় সংসদ ভেঙে দেওয়া, নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনের বিষয়ে তাদের সঙ্গে আবার আলোচনা হবে।