বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনে বাধা দেয়ার অভিযোগ এনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে বিজয়া দশমীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিমা বিসর্জনে বাধা দেওয়া। এরপর উল্টো মিথ্যা অভিযোগ এনে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়রি করা হয়েছে।’
আজ নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই ঘটনার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গত বুধবার রাতে দূর্গাপূজা শেষে বুড়িগঙ্গা নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার সময় তুচ্ছ ঘটনার জেরে র্যাব সদস্যদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগারদের তর্ক-বিতর্ক হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে আওয়ামী ক্যাডাররা অবরোধ করে বলে যে, র্যাবের সদস্যরা ক্ষমা না চাইলে তারা প্রতিমা বিসর্জন দিতে দেবে না। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে এবং হিন্দুদের ধর্মীয় রীতি পালনে বাধা ও ভয়ভীতি সৃষ্টি করে।’
এসময় বিএনপি নেত্রী নিপুণ রায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরির ইস্যুতে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় উপজেলার আগানগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর শাহ খুশী দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় মিথ্যা অভিযোগ এনে নিপুণ রায় চৌধুরীর বিরুদ্ধে যে সাধারণ ডায়েরি করেছে আমি তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
এসময় নিপুণ রায় চৌধুরী বলেন, ‘সারাদেশে রাত ৮টার মধ্যে দেবী বিসর্জনের নিদের্শনা ছিল। কিন্তু দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে রাত সাড়ে ১০টা বাজলেও দেবী বিসর্জন দেওয়া হয়নি। স্থানীয় আগানগর ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর শাহর সঙ্গে সাদা পোশাকে র্যাবের এক কর্মকর্তার কথা-কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। একপর্যায়ে ইউপি চেয়ারম্যান তার দলীয় লোকজন জড়ো করে বলেন, বিবাদের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত দেবী বিসর্জন দিতে দেবেন না। এরপর আমি প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়ে প্রতিমা বিসর্জনের আহ্বান জানাই।’
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী বলেন, ‘গত ১৪ বছর ধরে গণতন্ত্রকামী মানুষকে গুম-খুন-অপহরণ করে, হামলা মামলা নির্যাতন আর বিরোধী দলের সভা সমাবেশে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতা আঁকড়ে রেখেছে রাতের সরকার। ২০১৪ সালে জাতীয় নির্বাচনের আগেই সরকার গঠনের জন্য বিনা ভোটে ১৫৪ জনকে এমপি ঘোষণা দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। নির্বাচনের নামে প্রহসনের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতেই অর্থাৎ ২৯ ডিসেম্বর দিবাগত নিশিরাতে জনগণের ভোট ডাকাতি করে ব্যালট বাক্স ভর্তি করে আওয়ামী লিগ অবৈধভাবে গঠন করে রাতের সরকার। আর অবৈধভাবে টিকে থাকতে গিয়ে গুম, ক্রসফায়ার ও প্রতিহিংসামূলক মামলাকে বিরোধী দল দমনের প্রধান হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সত্য প্রকাশ বন্ধের জন্য নতুন নতুন ফরমান জারি করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে আইন করে দূর্নীতিকে আড়াল করতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ রাষ্ট্রের ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা করা হয়েছে। শুধুমাত্র দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টির জন্যই এই পরিপত্র জারি করা হয়েছে।’