বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন যে আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশের একটা টাকাও অপচয় করে না। প্রতিটি অর্থ ব্যয় করে বাংলাদেশের মানুষের স্বার্থে-কল্যাণে এবং তাদের ভালো-মন্দ দেখে।
শনিবার ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ কাজের উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। তিনি তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে পয়সা কেউ তুলে নিয়ে চলে যায়নি বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘সবসময় তাদের (বিএনপির) মনে এই ভয় থাকে। বিএনপি এ কথাই বলবে। এর পেছনের কারণ হলো অর্থ পাচার মামলায় তাদের নেতা তারেক জিয়াকে সাত বছরের সাজা ও ২০ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘অর্থ পাচার যাদের অভ্যাস, তারা (বিএনপি) ভাবে যে টাকা নিয় যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে বিনিয়োগ করছে, কেননা অন্য দেশের ব্যাংক থেকে ঋণ নিলে সেই ডলার সুদসহ পরিশোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে নিজেদের ডলার ব্যবহার করলে সেই টাকা আমাদের দেশেই থেকে যায়। সে কথা মাথায় রেখে আমরা ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়েছি।’
তিনি উল্লেখ করেন যে গভীর অর্থনৈতিক সংকটে থাকাকালীন বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কাকে কিছু ডলার ঋণ হিসেবে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের টাকা নিয়ে প্রায়ই প্রশ্ন করে বিএনপি।
তিনি আরও বলেন, ‘রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাওয়া নিয়ে তারা (বিএনপি) সারাদেশে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল মাত্র দুই দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০০১ থেকে ২০০৮ সালে তা বেড়ে হয় মাত্র পাঁচ বিলিয়ন ডলারে।
তিনি আরও বলেন, ‘ওই অবস্থান থেকে আমরা এর পরিমাণ ৪৮ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত তুলতে সক্ষম হয়েছি। করোনাভাইরাস মহামারির সময় এই পরিমাণ বৃদ্ধি হয় যখন যোগাযোগ, পরিবহন, আমদানি ও সবকিছু প্রায় বন্ধ ছিল।’
তিনি উল্লেখ করেন, কিন্তু যখন বিশ্ব খুলতে শুরু করে, তখন আমদানি বেড়েছে। বিশেষ করে করোনাভাইরাস ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে মুদ্রাস্ফীতি ও মন্দা বিশ্ব অর্থনীতিকে ধাক্কা দিয়েছে এবং বাংলাদেশও এর ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা আমাদের আমদানি ব্যয় রিজার্ভ মানি থেকে পরিশোধ করছি, পাশাপাশি আমরা বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দিয়েছি এবং বিনামূল্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছি। বিশ্বের উন্নত দেশগুলো এই টিকাদান ও পরীক্ষা বিনামূল্যে করেনি। আমরা নগদ টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করেছি। এর পরে আমরা অনুদান হিসাবে টিকা পেয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে পরিবহন খরচ,খাদ্য, জ্বালানি, ভোজ্যতেল, গম, মসুর ডাল ও ভুট্টার দাম বিশ্বজুড়ে বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এগুলো আমদানি করছি। আমরা চাল ও অন্যান্য খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন করছি, এর বাইরে আমাদের আরও কিছু জিনিস আমদানি করতে হবে। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সময় আমাদের কিছু জিনিস আমদানি করতে হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যা ব্যয় করছে তা শুধু দেশের জনগণ ও তাদের কল্যাণে। তাদের জন্য নগদ অর্থ দিয়ে খাদ্য সংগ্রহ, ক্যান্সারের ওষুধ, সার, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সংগ্রহের কাজ করছি।
তিনি আরও বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা দিয়ে আমরা বিমান কিনেছি। নদী ড্রেজিং আমাদের নিজেদের রিজার্ভের টাকা দিয়ে করেছি।’
আগামী দিনে খাদ্য সংকটের আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে তিনি আবারও যে কোনো ধরনের খাদ্যসংক্রান্ত সংকট এড়াতে সকলকে প্রতি ইঞ্চি জমি খাদ্য উৎপাদনে কাজে লাগানোর অনুরোধ করেন।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্ন ইতিবাচক দিকের কথা সংক্ষেপে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পটি দ্রুত শেষ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং ও সেতু বিভাগের সচিব মো. মঞ্জুর হোসেন।
ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নিয়ে একটি ভিডিও তথ্যচিত্র অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।