back to top
26 C
Dhaka
Saturday, October 5, 2024

উত্তরাঞ্চলের আরও দুদিনের মধ্যে ১৭ জেলা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা

ভারতের মেঘালয় ও আসামে ক্রমাগত বৃষ্টি হওয়ায় তা বাংলাদেশে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটাতে পারে বলে সতর্ক করে দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এর মধ্যেই সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলা বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র বলছে, আগামী দুই দিনের মধ্যে উত্তরাঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলের আরও ১৭টি জেলা বন্যায় আক্রান্ত হতে পারে। কারণ সেসব এলাকায় বন্যার তীব্রতা বাড়ছে, নদীগুলোর পানি আরও বাড়তে শুরু করেছে। সেই সঙ্গে সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ”সিলেট, সুনাগমঞ্জ এলাকায় আজ (শনিবার) এবং আগামীকালও বৃষ্টি হবে। ফলে সেসব এলাকার বন্যার পানি আরও বাড়তে পারে বলে আমরা আশঙ্কা করছি। সেই সঙ্গে যমুনা নদীর পানিও বাড়তে শুরু করেছে।”

”ফলে উত্তরাঞ্চলের আরও কিছু জেলা প্লাবিত হতে পারে। বন্যার এই পানিটা আবার নীচের দিকে নেমে এলে মধ্যাঞ্চলের কিছু জেলাও প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।”

সড়ক ডুবে যাওয়ায় সুনামগঞ্জের সঙ্গে আগেই সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মোহনগঞ্জে রেলব্রিজ ভেঙ্গে যাওয়ায় নেত্রকোনার সঙ্গেও রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

যেসব জেলায় বন্যা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় তা দেশের কুড়িগ্রাম, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা থেকে প্রবেশে করে আরও এগিয়ে আসছে।

ফলে জামালপুর, বগুড়া, শেরপুর, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, লালমনিরহাট, নীলফামারি ও পাবনায় বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়া নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভিবাজারে বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে। বন্যার পানি আরও নীচের দিকে নেমে এলে রাজবাড়ী, ফরিদপুর, শরীয়তপুর ইত্যাদি এলাকা প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।

মেঘালয় ও আসামের বৃষ্টি আশঙ্কা আরও বাড়াচ্ছে
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় চেরাপুঞ্জিতে আরও ৫৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে। গত তিনদিনে এখানে প্রায় আড়াই হাজার মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আসামে বৃষ্টি হতে পারে অন্তত ৩০০ মিলিমিটার। এসব এলাকার বৃষ্টির পানি বাংলাদেশের সিলেট ও কুড়িগ্রাম দিয়ে নেমে আসবে। ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত বৃহস্পতিবার ৯৭২ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা ১২২ বছরের মধ্যে রেকর্ড।

মেঘালয় ও আসামে বৃষ্টি না কমা পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির আশা দেখছেন না আবহাওয়াবিদরা।

সিলেট, কানাইঘাট, সুনামগঞ্জ ও দিরাইয়ে সুরমা নদী, কুড়িগ্রামে ধরলা, চিলমারিতে ব্রহ্মপুত্র, লরেরগড়ে জাদুকাটা, কলমাকান্দায় সোমেশ্বরী নদীর পানি, নাকুয়াগাঁওয়ে ভোগাই বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদীর পানিও বাড়ছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলসহ, ভারতের আসাম, মেঘালয়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এসব পানি বাংলাদেশের সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কুড়িগ্রাম এলাকা থেকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সাগরে নামে।

ফলে এসব এলাকার নদীর পানি আরও বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করছে বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

সুনামগঞ্জ শহরের বাসিন্দা তোফাজ্জল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছেন, ”বন্যায় আমার বাড়ি ডুবে গেছে। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একজন প্রতিবেশীর দোতলার ছাদে উঠেছি। আমার মতো গ্রামের আরও অনেকে এখানে আশ্রয় নিয়েছে।”

এখনো সেখানে দ্রুত পানি বাড়ছে বলে তিনি জানান।

আক্রান্তদের অনেকে প্রতিবেশীর বাড়ি, নৌকায় আশ্রয় পেলেও গবাদিপশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন। সড়ক বা বাধগুলো ডুবে যাওয়ায় এসব প্রাণী রাখার জায়গা পাচ্ছেন না।

সাব-স্টেশনে পানি ঢুকে পড়ায় সুনামগঞ্জ এলাকার অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। ফলে মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করছে না।

শুক্রবার থেকে বন্যা দুর্গতদের উদ্ধারে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে শুরু করেছে সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন, আটকে পড়া মানুষকে উদ্ধারের বিষয়কে এখন তারা অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।

ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

সিলেট জেলাতেও বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। রানওয়ের কাছাকাছি পানি চলে আসায় সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ক্যাম্পাসে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

রংপুরের সাইদুল ইসলাম বলছেন, তিনি বারো বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছিলেন। বন্যার আগে আগে মাত্র পাঁচ বিঘার ফসল তুলতে পেরেছিলেন। বাকিটা পানির নিচে চলে গেছে।

বন্যা ছড়িয়ে পড়তে পারে মধ্যাঞ্চলেও
বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া জানিয়েছেন, ভারতের মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ৯৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। একশ বাইশ বছরে এটি রেকর্ড। মেঘালয়ের চেরাপুঞ্জির সেই বৃষ্টির পানি খুবই দ্রুত গতিতে সুনামগঞ্জ এবং সিলেট অঞ্চলে নেমে এসেছে। সেজন্য বন্যা অল্প সময়ে সিলেট অঞ্চলে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় দেশের উত্তরে কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট এবং নীলফামারী সহ কয়েকটি জেলাতেও আগামী কয়েকদিন বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে।

এছাড়া উত্তরের জেলাগুলোর পানি নামার সময় সিরাজগঞ্জ টাঙ্গাইলসহ মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতেও বন্যা হতে পারে।

বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্রের কর্মকর্তা আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া মনে করেন, এবছর বর্ষা মৌসুমের আগেই এপ্রিল মে মাসে ব্যাপক বৃষ্টি হয়েছে। সেকারণে নদীগুলোতে বিপৎসীমার কাছে পানি ছিল। এখন ভারী বৃষ্টি হওয়ায় অল্প সময়েই সিলেট অঞ্চলসহ বিভিন্ন জায়গা প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়েছে।

সম্পর্কিত খবর

আমাদের সাথে সংযুক্ত হোন

0FansLike
3,905FollowersFollow
0SubscribersSubscribe

সর্বশেষ