পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, শুধু একটি জাহাজের জন্য বা সুনির্দিষ্ট কোনো একটি কারণে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাপ্তাহিক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এবং জনকূটনীতি বিভাগের মহাপরিচালক সেহেলী সাবরীন এমনটা জানান।
রাশিয়া বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকেছিল এবং সেখানে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, এটাকে তলব বলা ঠিক হবে না, কারণ, রাশিয়ার জাহাজ ভিড়তে না দেওয়ায় ঘটনাটি ছয় সপ্তাহ আগের।
প্রসঙ্গত, ২১ ফেব্রুয়ারি মস্কোয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়।
পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা রাশিয়ার জাহাজগুলো বাংলাদেশের বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তাঁকে তলব করা হয়েছে বলেই রাশিয়ার সরকারি বার্তা সংস্থার খবরে বলা হয়।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে উদ্ধৃত করে দেশটির বার্তা সংস্থা তাস জানিয়েছে, বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ পণ্যবাহী রাশিয়ার জাহাজ দেশটির বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে যে খবর এসেছে, সে বিষয়ে দেশটির কূটনৈতিক মিশনের প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের এই পদক্ষেপ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ঐতিহ্যগত বন্ধুত্বপূর্ণ চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তা বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুই দেশের সহযোগিতার সম্ভাবনার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
এদিকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মস্কোয় রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যা যা আলোচনা হয়েছে, সেসব বিষয়ে মস্কোর বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে।
এ প্রতিবেদনকে উদ্ধৃত করে ব্রিফিংয়ে মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন জানান, রাশিয়ার পক্ষ থেকে জাহাজকে বাংলাদেশে ভিড়তে না দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে কোনো নির্দিষ্ট জাহাজ বা সংখ্যা নিয়ে আলোচনা হয়নি। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞার বাইরেও রাশিয়ার ১ হাজার ১০০ জাহাজ রয়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা রাশিয়ার ৬৯টি জাহাজকে বাংলাদেশ কেন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে জানতে চাইলে সেহেলী সাবরীন জানান, বাংলাদেশ বাণিজ্যনির্ভর দেশ। এ কারণেই আমাদের দেশের স্বার্থ বিবেচনায় ভেবেচিন্তে অনেক সিদ্ধান্ত নিতে হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক বড়, প্রায় ৮০ শতাংশ।
এর আগে রাশিয়ার পতাকাবাহী ‘উরসা মেজর’ নামের জাহাজটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালামাল নিয়ে গত ১৪ নভেম্বর রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ বন্দর ছেড়ে আসে। ২৪ ডিসেম্বর জাহাজটির বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল।
তবে ওই জাহাজ বাংলাদেশে আসার আগেই যুক্তরাষ্ট্র ঢাকাকে জানায়, উরসা মেজর জাহাজটি আসলে রাশিয়ার মালিকানাধীন ‘স্পার্টা থ্রি’ নামের একটি জাহাজ। এর ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। নাম বদলে জাহাজটিকে উরসা মেজর নামে নিবন্ধন দেওয়া আছে।
এই জাহাজের উপর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এটি বাংলাদেশে ভিড়তে দিলে সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বিবেচনায় সরকার জাহাজটি দেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি।