প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশের এখনও পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ রয়েছে, যা পাঁচ মাসের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যথেষ্ট।
তিনি বলেন, ‘২০২২ সালের ৩ নভেম্বর পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তারপরও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ দিয়ে পাঁচ মাসের জন্য পণ্য আমদানি করা সম্ভব। আন্তর্জাতিক মানদন্ডে যদি ৩ মাসের আমদানী পরিমান রিজার্ভ থাকে তাহলে সেটাই যথেষ্ট।’
রবিবার একাদশ জাতীয় সংসদের ২০তম অধিবেশনে সমাপনী ভাষণ দেয়ার সময় সংসদ নেত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, সবাই এখন রিজার্ভের কথা বলে এবং সবাই এটা নিয়ে বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছে। ১৯৯৬ সালে রিজার্ভ ছিল মাত্র ২ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, কিন্তু তার প্রথম সরকার ২০০১ সালের মধ্যে এটি প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় এসে ৫ দশমিক ৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পায়- যা ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি তা ১৭ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন, ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি ৩২ দশমিক ০৯ বিলিয়ন, ২০২০ সালের ৩০ জুন ৩৬ দশমিক ০৪ বিলিয়ন এবং ২০২১ সালের ৩০ জুন ৪৬ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়।
তিনি বলেন, কোভিড-১৯ এর সময় আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য ব্যয় প্রায় বন্ধ থাকায় তা প্রায় ৪৮ বিলিয়নে উঠে গিয়েছিল।
পরবর্তী আমদানী বৃদ্ধি এবং সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বস্তবায়ন এবং ক্যাপিটাল মেনিারিজ আমদানীর ফলে রিজার্ভ কিছুটা কমে বর্তমান ৩ নভেম্বর ৩৫ দশমিক ৭২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দঁড়িয়েছে।
তিনি আরও বলেন, যখন কোভিড বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হয়, তখন পণ্য আমদানি স্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। তাই, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হ্রাস পেয়েছে।
তবে তিনি বিলাসবহুল পণ্যের আমদানি হ্রাস এবং কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উচ্চ কর আরোপের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
এছাড়া শেখ হাসিনা তার ভাষণে খাদ্যের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করতে, ডলার সংকট নিরসনে, আমদানি ব্যয় কমাতে এবং ওএমএসসহ খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি সম্প্রসারণে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের ওপর আলোকপাত করেন।
তিনি বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সম্প্রসারণ, রপ্তানি বৃদ্ধি, ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব, সরকারের ঋণের পরিমাণ এবং বৈদেশিক ঋণের কথাও তুলে ধরেন।
পরবর্তীতে ৬টি অধিবেশন স্থায়ী সংসদের ২০তম অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
গত ৩০ অক্টোবর শুরু হওয়া অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির স্থগিতাদেশ পাঠ করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ এখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সঙ্কট এবং এর পরিপ্রেক্ষিতে কোভিড-১৯ মহামারি পরবর্তী নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার পরিণতির মুখোমুখি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশও এর থেকে আলাদা নয়। বাংলাদেশও এর ফল ভোগ করছে।’
তিনি বলেন, বিশ্বের প্রায় সব দেশেই মুদ্রাস্ফীতি রেকর্ড করেছে।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন মুদ্রার বিপরীতে ডলারের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি সংকটকে আরও গভীর করেছে।
ভর্তুকি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংকটের কারণে সরকারকে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, খাদ্য আমদানি এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিসহ বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত ভর্তুকি দিতে হবে।
তিনি বলেন, ভর্তুকির মোট চাহিদা ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে।
খাদ্যের বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, দেশের কোষাগারে বর্তমানে ১৫ লাখ ৭৩ হাজার ৪৮৫ টন খাদ্যশস্য মজুদ থাকায় উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এছাড়া সরকার আরও খাদ্য আমদানির পদক্ষেপ নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশের ২৯ শতাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে এবং বিভিন্ন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি জোরদার করা হয়েছে এবং ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেল) স্কিম উপজেলায় নামিয়ে আনা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা ওএমএসের মাধ্যমে দরিদ্রদের আরও বেশি পরিমাণে প্রয়োজনীয় জিনিস সরবরাহ করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমরা আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করছি যাতে দেশের মানুষ ভালো থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবর সময়কালে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ যথাক্রমে ৭ শতাংশ এবং ২ শতাংশ ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে আমদানির জন্য খোলা এলসি ১১ দশমিক ৭ শতাংশ কমেছে।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে দেশে যাতে কোনো ডলার সংকট না হয় সেদিকে সরকার নজর রাখছে।
বৈদেশিক ঋণ সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের মোট ঋণ জিডিপির মাত্র ৩৬ শতাংশ এবং বৈদেশিক ঋণ জিডিপির মাত্র ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর আমরা (বাংলাদেশ) ঋণ বা ঋণ খেলাপিদের ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হইনি এবং ভবিষ্যতেও ব্যর্থ হব না।
প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘আমরা আমাদের অর্থনীতিকে প্রাণবন্ত রাখার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’
এ প্রেক্ষাপটে তিনি সকল মানুষকে মিতব্যয়ীতা অবলম্বন, সম্পদের অপচয় বন্ধ, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং আমদানি পণ্যের ওপর নির্ভরতা কমানোর আহ্বান জানান।