পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, মহার্ঘ ভাতা পদ্ধতি চিরতরে দূর করা হবে। আমরা ২০১৫ সালে সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন দ্বিগুণ বাড়িয়েছি। তাদের বসবাসের জন্য সুন্দর সুন্দর ফ্ল্যাট তৈরি করে দিয়েছি। যা অতীতের কোনো সরকার করেনি। আমরা আর মহার্ঘ ভাতা বাড়াব না। এটা একটা পারমানেন্ট ট্র্যাপ হয়ে যায়।
বুধবার (৩১ মে) নিজ দপ্তরে – এবারের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের জন্য কী থাকছে- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে এসব বলেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
এম এ মান্নান বলেন, যেহেতু মূল্যস্ফীতি বেড়েছে, সেহেতু সাময়িক ভিত্তিতে তাদের কিছু ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তবে মহার্ঘ ভাতা আমাদের সিস্টেম থেকে চিরতরে দূর করা হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমরা গ্রামীণ প্রকল্পগুলো বেশি বাস্তবায়ন করতে চাই। গ্রামীণ সড়ক, সেতু, কালভার্ট, স্বাস্থ্য খাতের অবকাঠামো, শিক্ষাক্ষেত্র অগ্রাধিকার পাবে এবং এগুলো অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত বলে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি। এ ছাড়া কৃষি যান্ত্রিকীকরণে গুরুত্ব দেওয়া হবে। সারে, বিদ্যুতে ভর্তুকি থাকবে।
আমার নির্বাচনী এলাকায় ৭০ শতাংশ ভোটার গ্রামের উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, আমার আসনে কোনো পৌরসভা নেই। আমি গ্রামে গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। গ্রামের মানুষ চায় চোর-ডাকাতের সমস্যা যেন না হয়। বিভিন্ন ছুতোয় ঘোরাঘুরি করা ছোট অফিসারগুলোর হাত থেকে তারা সুরক্ষা চায়। তারা সুষ্ঠুভাবে কাজ করে খেতে চায়। তারা চাল, ডাল ও ভাতা কার্ড চায়। ডেমোক্রেসি ও মানবাধিকার তারা খায় না।
প্রকল্প নেওয়ার ক্ষেত্রে কোন ধরনের প্রকল্পে গুরুত্বারোপ করা হবে সে বিষয়ে তিনি বলেন, জনগণের জন্য কল্যাণকর হবে তেমন প্রকল্প আমরা হাতে নেব। লোক দেখানো কিংবা চোখ ধাঁধানো কোনো প্রকল্প আমরা হাতে নেব না। উন্নয়নমূলক, স্বাস্থ্যসেবামূলক ও দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে এমন প্রকল্প হাতে নেয়া হবে।
আসন্ন নির্বাচনী বাজেট প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নির্বাচনী হাওয়া স্বীকার করি। নির্বাচনের বিষয়গুলো আমাদের চিন্তায় আছে। আমরা উন্নয়নমূলক কাজ ধারাবাহিকভাবে করে আসছি। এগুলো করে খুব ভালো ফলও আমরা পেয়েছি। সেই ধারাবাহিকতা এবারও থাকবে।
মূল্যস্ফীতি একটা চরম ব্যাধি মন্তব্য করে তিনি বলেন, উন্নয়নশীল সব দেশেই এটি থাকে। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রের মতো মোড়ল দেশগুলোতে আগে কম মূল্যস্ফীতি থাকলেও এখন বেশি মূল্যস্ফীতি রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আমাদের কিছু কাজ করতে হবে। আমাদের প্রথম কাজ হবে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানো। দেশের ৭০ শতাংশ মানুষের চাওয়া চাল, ডাল, তেল, মরিচ, নুনের দাম কমানো। এগুলোতে কর বাদ দিয়ে দেন, চলাচল নির্বিঘ্ন করেন, চাঁদাবাজি পুরোপুরি নির্মূল করেন। উৎপাদনে জোর দেন। তাহলে দুই থেকে পাঁচ মাসের মধ্যে বাজার স্থিতিশীল হবে।
কয়েক বছর আগে মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশ ছিল জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সেখানে ঘোরাঘুরি করলে ভালো হতো। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও কোভিডের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল। এটা পুরোপুরি রোধ করা সম্ভব হবে না। বেশি বেশি করে তেল, ডাল ও পেঁয়াজ আমদানি করতে হবে। যাতে এসব পণ্যের দাম স্বাভাবিক রাখতে পারি। যদি আজ মৌলভীবাজারে পেঁয়াজের দাম বাড়ে, তাহলে কাল সকালের মধ্যে ১০০ ট্রাক পেঁয়াজ পাঠিয়ে দিতে হবে। তাহলে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, সব জায়গায় সিন্ডিকেট আছে। যদিও এটা দেখা যায় না। বাজারে দ্রুত হস্তক্ষেপ করা গেলে বাজার নড়াচড়া করবে না। মূল্যস্ফীতি অনেক কষ্টের বিষয়। সরকার আপ্রাণ চেষ্টা করছে মূল্যস্ফীতি দমিয়ে রাখতে। কিন্তু আমাদের আরও কিছুদিন সহ্য করতে হবে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও জানান, প্রকল্প পরিচালকরা তাদের জায়গায় থাকে না। তারা সবাই বড় শহর কিংবা বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ জায়গা ঢাকায় এসে বসবাস করেন। পিডি হলে একখান গাড়ি পাওয়া যায়। সুতরাং ঢাকায় বউ বাচ্চা থাকল, আমিও এসে থাকলাম। আপনার প্রকল্প পঞ্চগড়ে, তাহলে আপনি ওখানে থাকেন। ঢাকায় থাকলে পঞ্চগড়ের প্রকল্প কীভাবে পর্যবেক্ষণ করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে বলেই যাচ্ছেন। কিন্তু এটা এখনো পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি।