দীর্ঘ ১০ বছর পর বন্দর নগরী চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের সমাবেশে যোগ দিবেন প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। তাই জনসভাকে ঘিরে চলছে পক্ষকালব্যাপী ব্যাপক প্রস্তুতি। আগামী ৪ ডিসেম্বর নগরীর ঐতিহাসিক রেলওয়ে পলোগ্রাউন্ডের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এ জনসভা।
শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে ব্যাপক প্রচারে সরগরম হয়ে উঠেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। পুরো চট্টগ্রাম জুড়ে এখন বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছায় সিক্ত করতে নেতাকর্মীরা ব্যস্ত ব্যানার-পোস্টার ও বিলবোর্ড লাগাতে। জনসভা ঘিরে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। জনসভা সফল করতে দিন-রাত নগর থেকে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতা থেকে তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।
ইতোমধ্যে সমাবেশস্থলে মঞ্চ তৈরির কাজ এগিয়ে চলেছে। নৌকার আদলে ১৬০ ফুট দীর্ঘ মঞ্চটি তৈরির কাজ চলছে। মঞ্চের মাঝখানের ৪০-৮০ ফুটের মধ্যে ২০০ অতিথি বসবেন। মঞ্চের উচ্চতা হবে সাত ফুট। ১৫ নভেম্বর থেকে ভেন্যু তৈরির কাজ শুরু হয়। জনসভার জন্য ঢাকা থেকে আসছে দেড়শ মাইক। মূলমঞ্চ ছাড়াও জনসভাস্থলের আশপাশে বসানো হচ্ছে সাতটি বড় পর্দা। এসব পর্দায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে প্রধানমন্ত্রীসহ নেতাদের বক্তব্য।
এছাড়াও মঞ্চের সামনে মুক্তিযোদ্ধা, ভিআইপি ও নারীদের বসার জন্য পৃথক প্যান্ডেল তৈরি করা হচ্ছে। প্রায় ১০ লাখ মানুষ এ সমোবেশে জড়ো হবেন বলে ধারণা করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
নগরীর প্রেসপাড়া খ্যাত আন্দরকিল্লাস্থ বিভিন্ন ছাপা খানায় ঘুরে দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষ্যে চলছে শুভেচ্ছা বার্তা সম্বলিত ব্যানার, পোস্টার ও লিফলেট তৈরির ধুম। এদিকে নগরীর সড়কে সড়কে শোভা পাচ্ছে হরেক রকমের ব্যানার-পোস্টার। যেখানে স্থান পাচ্ছে বিভিন্ন রকমের শুভেচ্ছা বার্তা। এছাড়া জনসভার স্থানে চলছে তুমুল প্রস্তুতি। প্রতিদিনই চলছে সভা-সমাবেশ মাইকিং, লিফলেট বিতরণসহ নানা ধরণের প্রচার প্রচারণা। নগরীর ২০টি স্পটে চলছে টানা মাইকিং।
চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এ জনসভা সফলে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধিসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা
এছাড়া ২৯ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নগর জুড়ে ঘোড়াগাড়ি ও ট্রাক নিয়ে ব্যাতিক্রমী প্রচারণা চালানো হচ্ছে।
জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন জানান, ইতোমধ্যে পলোগ্রাউন্ডের জনসভার প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। আমাদের প্রত্যেক এমপি এবং নেতারা নিজ নিজ এলাকা থেকে লোকজন আনার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছেন। মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ থেকে প্রচুর লোকজন আসবে।
তিনি বলেন, গত ১৪ বছরে প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামে প্রচুর উন্নয়ন করেছেন। এই উন্নয়নের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতেই জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে জনসভায় আসবেন। ৪ ডিসেম্বর পলোগ্রাউন্ড মাঠে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে যাবে। মাঠের বাইরে আরও ১০ দশ গুণ লোকের সমাগম হবে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রামের গৌরবময় ভূমিকা আছে। চট্টগ্রামের উন্নয়নের দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রী নিজের কাঁধে নিয়ে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে এবারও হয়তো চট্টগ্রামবাসীকে নিরাশ করবেন না। প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে স্বাগত জানাতে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগমনকে ঘিরে চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ সর্বসাধারণের মধ্যে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। এ উপক্ষে নগরীকে সাজিয়ে তুলতে কাজ করছে সিটি করপোরেশন। নতুন করে রঙ করা হয়েছে নগরীর প্রধান ও বড় দুই ফ্লাইওভার, নগরীর প্রতিটি সড়ক ডিভাইডার, সরকদ্বীপসমূহ নান্দনিকভাবে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে।’
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ আপামর জনগণের সংগঠন। দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম আসছেন। সুতরাং ৪ ডিসেম্বরের মহাসমাবেশে শুধু আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আসবেন তা নয়। প্রিয় নেত্রীকে দেখতে চট্টগ্রামের লাখ লাখ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবেই চলে আসবে। আর এতে পলোগ্রাউন্ড মাঠ ছাপিয়ে আশেপাশের এলাকাও জনসমুদ্রে পরিণত হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০১২ সালের ২৮ মার্চ পলোগ্রাউন্ড মাঠে সর্বশেষ আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দীর্ঘ ১০ বছর পর একই মাঠে আবারও ভাষণ দিবেন প্রধানমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই এ জনসভা সফল করতে প্রাণপণ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগ।