ড্রোন হামলার মাধ্যমে আল কায়েদা প্রধান আয়মান আল জাওয়াহিরিকে হত্যা করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আফগানিস্তানে মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন ওসামা বিন লাদেন প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠন। একাধিক টুইটে আল জাওয়াহিরি হত্যার বিষয়টি অস্বীকার করা হলেও এখন পর্যন্ত শক্ত প্রমাণ দেয়নি আল-কায়েদা।
এদিকে মার্কিন প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের বলেছেন, জাওয়াহিরি অনেক বছর ধরে লুকিয়ে ছিল এবং তাকে খুঁজে বের করে হত্যা করার ঘটনাটি কাউন্টার-টেররিজম ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘সতর্ক, ধৈর্য্যশীল এবং অবিচল’ কাজেরই ফলাফল।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে ওই মার্কিন কর্মকর্তা কাবুলের ওই অভিযানের বিষয়ে যেসব বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন তা প্রকাশ করেছে গণমাধ্যম রয়টার্স। ফেস দ্যা পিপলের পাঠকদের জন্যে রয়টার্সের সেই প্রতিবেদন অনুবাদ করা হলো:
* কয়েক বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটি নেটওয়ার্কের বিষয়ে সজাগ ছিলো। তাদের মূল্যায়ন ছিল, এই নেটওয়ার্ক জাওয়াহিরিকে আশ্রয় দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সরে আসার পর গত এক বছর ধরে আফগানিস্তানে আল কায়েদার উপস্থিতির ওপর নজর রাখছিলেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
চলতি বছর প্রথমবারের মতো গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জাওয়াহিরির পরিবারকে শনাক্ত করে। এদের মধ্যে ছিলেন তার স্ত্রী, তার কন্যা ও ওই নারীর সন্তানরা। তাদের কাবুলের একটি নিরাপদ বাড়িতে রাখা হয়েছিল। পরে ওই একই বাড়িতে জাওয়াহিরির উপস্থিতিও শনাক্ত হয়।
* কয়েক মাসের মধ্যে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা আরও নিশ্চিত হন যে, কাবুলের ওই নিরাপদ বাড়িতে তারা জাওয়াহিরিকে সঠিকভাবেই শনাক্ত করেছেন। এপ্রিলের প্রথমদিকে তারা মার্কিন প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি জানাতে শুরু করেন। পরে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে বিষয়টি জানান।
“একাধিক স্বাধীন উৎসের তথ্যের মাধ্যমে আমরা (তার) জীবনযাত্রার একটি ছক তৈরি করতে সক্ষম হয়েছিলাম, অভিযান সেটিই কাজে লেগেছে,” বলে দাবি ওই কর্মকর্তার।
ওই কর্মকর্তা জানান, একবার জাওয়াহিরি কাবুলের নিরাপদ আস্তানায় আসার পর গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তাকে ওই বাড়ির বারান্দায় দেখতে পায় আর সেখানেই তার ওপর একাধিকবার আঘাত হানা হয়।
* ওই ভবনের কাঠামোর জন্য কোনো হুমকি তৈরি না করে এবং বেসামরিক ও জাওয়াহিরির পরিবারের সদস্যদের ঝুঁকি সর্বনিম্ন রেখে কীভাবে জাওয়াহিরিকে হত্যা করতে অভিযান চালানো যায় তা নিশ্চিত করতে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ওই নিরাপদ আস্তানার গঠন ও ধরন অনুসন্ধান করার পাশাপাশি এর বাসিন্দাদের যাচাই করে দেখা হয়।
পরের সপ্তাহগুলোতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন গোয়েন্দা তথ্যগুলো যাচাই ও পদক্ষেপ নেওয়ার সেরা উপায় নিয়ে আলাপ করতে প্রধান উপদেষ্টাদের ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করেন। গত ১ জুলাই হোয়াইট হাউসের সিচুয়েশন রুমে সিআইএ-র পরিচালক উইলিয়াম বার্নসসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা প্রস্তাবিত একটি অভিযানের বিষয়ে বাইডেনকে অবহিত করেন।
ওই বৈঠকে বাইডেন বিভিন্ন প্রশ্ন করেন এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তৈরি করা ওই নিরাপদ আস্তানার একটি মডেল নিবিড়ভাবে পরীক্ষা করে দেখেন। তিনি আলো, আবহাওয়া, নির্মাণ উপকরণসহ যে যে বিষয়গুলো অভিযানের সাফল্যের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে সেগুলো নিয়ে প্রশ্ন করেন বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
কাবুলে হামলা চালালে সম্ভাব্য যে প্রভাব সৃষ্টি হবে বাইডেন তাও বিশ্লেষণ করে দেখার অনুরোধ করেছিলেন।
* আন্তঃসংস্থা জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের ছোট একটি চক্র গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখেন তারপর আল কায়েদার নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়ার ভিত্তিতে জাওয়াহিরি একটি আইনসম্মত লক্ষ্যস্থল বলে নিশ্চিত করেন।
এরপর ২৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট বাইডেন চূড়ান্ত ব্রিফিংয়ের জন্য মন্ত্রিসভার প্রধান সদস্যদের ও উপদেষ্টাদের ডাকেন এবং জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হলে তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কী ধরনের প্রভাব পড়বে তা নিয়ে আলোচনা করেন।
ওই রুমে থাকা অন্যান্যদের মতামত নেওয়ার পর বাইডেন বেসামরিকদের নিহত হওয়ার ঝুঁকি সর্বনিম্নে রাখার শর্তে ‘এটি সুনির্দিষ্ট উপযোগী বিমান হামলার’ অনুমোদন দেন।
* কাবুলের স্থানীয় সময় রবিবার (৩১ জুলাই) ভোর ৬টা ১৮ মিনিটে একটি ড্রোন থেকে দুটি ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে জাওয়াহিরিকে হত্যা করা হয়।