লোহিত সাগর এবং এডেন উপসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত আফ্রিকান দেশ জিবুতি। আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও ভৌগলিক অবস্থানের সাপেক্ষে বেশ গুরুত্বপূর্ণ দেশটি। যে কারণে ক্ষুদ্র এই দেশটিতে সামরিক ঘাঁটি গড়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ আরো ৩ দেশ। সবশেষ সেই তালিকায় যোগ হয় চীন।
বর্তমানে দেশটি ক্রমবর্ধমান অর্থায়নের চাপের মধ্যে লড়াই করছে৷ পরিস্থিতি এমনই নাজুক, দেশটি তার দুটি প্রধান দ্বিপাক্ষিক ঋণদাতাকে ঋণ পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করেছে।
জিবুতির প্রধান ঋণদাতার মধ্যে অন্যতম চীন। জিবুতিতে চীনের বিশাল বাণিজ্যিক এবং সামরিক স্বার্থ রয়েছে। ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ জিবুতির এমন সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছে চীন।
চীনের সংবাদমাধ্যম সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টে বলা হয়, চীনা ঋণ নিয়ে আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ জাম্বিয়ার পর পূর্বাঞ্চলীয় দেশ জিবুতি ঋণের কিস্তি পরিশোধে অপারগতা প্রকাশ করেছে। ২০২০ সালে আফ্রিকার প্রথম দেশ হিসেবে জাম্বিয়া চীনা ঋণের খেলাপি হয়েছিল।
জিবুতি সম্পর্কে সর্বশেষ প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক বলেছে, দেশটির বাহ্যিক ঋণ পরিষেবা ব্যয় ২০২২ সালে তিনগুণ বেড়েছে; যা গত বছরে ৫৪ মিলিয়ন ডলার থেকে ১৮৪ মিলিয়ন ডলার এবং পরবর্তী বছর আরও বৃদ্ধি পেয়ে তা ২৬৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়। আগামী বছর এ খরচ ২৬৬ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আফ্রিকার পূর্বাঞ্চলে লোহিত সাগরের তীরে কৌশলগতভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ একটি দেশ জিবুতি। আফ্রিকার সঙ্গে এশিয়া ও ইউরোপ সংযোগ সৃষ্টি করায় জিবুতি বন্দরের দিকে বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর দৃষ্টি বহুকালের।
আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও এ দেশে যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স ও জাপানের সামরিক ঘাঁটি আছে। ২০১৭ সালে চীন আফ্রিকার এই দেশে সামরিক ঘাঁটি গড়ে। শুধু তাই নয়, জিবুতিতে চীন-পরিচালিত দোরালেহ বন্দরের পাশেই এই ঘাঁটি।
২০১৩ সালে ৪৯২ মিলিয়ন ডলার চীনা ঋণ খরচ হয়েছে জিবুতি থেকে ভূ-বেষ্টিত ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবার মধ্যে রেললাইন স্থাপনে এবং ৩২২ মিলিয়ন ডলার ঋণের অর্থ খরচ হয়েছে জিবুতি থেকে ইথিওপিয়ার হাদাগালা শহরের মধ্যে ১০১ কিলোমিটার দীর্ঘ পানি সরবরাহের পাইপলাইন তৈরিতে।
২০১৬ সালে চীনের কাছ থেকে ৩৪৪ মিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়ে জিবুতি নিজ দেশে দোরালেহ বহুমুখী বন্দর তৈরি করে।
আকাশছোঁয়া বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতি, প্রতিবেশী ইথিওপিয়ায় অর্থনৈতিক মন্দা এবং এ অঞ্চলের তীব্র খরা সাম্প্রতিক সময়গুলোতে জিবুতির অর্থনৈতিক অবস্থাকে আরও খারাপ করেছে।