ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) এক শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের ঘটনার বিষয়ে জানতে গিয়ে ছাত্রলীগের হাতে অবরুদ্ধ হয়েছেন সহকারী প্রক্টর রিজওয়ানুল হক। অভিযোগ উঠেছে ঘটনার সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া তিন সাংবাদিককে ধরে পিটুনি দিয়েছেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।
গতকাল শনিবার রাত ১০টা পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলে এসব ঘটনা ঘটে বলে ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে।
ঘটনা নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল হলের প্রথম বর্ষের একজন শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের হাতে মারধরের শিকার হন। এ নিয়ে জানতে পেরে ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবকরা শঙ্কা প্রকাশ করলে সহকারী প্রক্টর রিজওয়ানুল হক তাঁদের নিয়ে শনিবার রাত ১০টার শাহজালাল হলে যান। এ সময় ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে সহকারী প্রক্টরকে হলে আটকে রাখেন। একপর্যায়ে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী সহকারী প্রক্টরকে মারধর করতেও উদ্যত হন।
এরপর হঠাৎ-ই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন সহকারী প্রক্টর রিজওয়ানুল হক। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহম্মদ মহির উদ্দিন এসে তাঁকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। তাকে সেখানে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া হয়।
রবিবার বিকেল পর্যন্ত রিজওয়ানুল হকের মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাঁর স্ত্রীর ব্যবহৃত নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রিজওয়ানুল হক আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। শনিবার রাতের ঘটনার জন্য তিনি অসুস্থ হননি। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি এ মুহূর্তে বিশ্রামে আছেন।
এদিকে সহকারী প্রক্টরকে অবরুদ্ধ করে রাখার ঘটনা নিয়ে সংবাদ সংগ্রহ করতে শাহজালাল হলে গিয়ে ছাত্রলীগের কর্মীদের তোপের মুখে পড়েন ক্যাম্পাসের তিনজন সাংবাদিক। তাঁরা হলেন ঢাকা পোস্টের প্রতিনিধি মুসাদ্দিকুল ইসলাম, দৈনিক খোলা কাগজের প্রতিনিধি ইফতে খায়রুল ইসলাম ও ক্যাম্পাস লাইভ ২৪ ডটকমের প্রতিনিধি রায়হান আবিদ।
শাহজালাল হল থেকে বের হয়ে নিজেদের হলের দিকে যাওয়ার সময় শহীদ শামসুল হক হলের সামনে সাংবাদিকদের ওপর হামলা করেন ছাত্রলীগের কর্মীরা।হামলাকারীরা সাংবাদিক রায়হান আবিদের সাইকেল ও মোবাইল ফোন ভাঙচুর করেন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, রাত আড়াইটার দিকে শহীদ নাজমুল আহসান হলের অতিথি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিককের সঙ্গে বসেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি খন্দকার তায়েফুর রহমান। তিনি এ ঘটনায় জড়িত কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বলেন, যাঁরা হামলা করেছেন, তাঁরা ছাত্রলীগের কেউ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সাংবাদিকদের মারধরের বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রাকিবুল হাসান বলেন, ঘটনা পর আমরা প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। এখন দেখার বিষয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়। তবে এর আগেও অনেক তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মুহম্মদ মহির উদ্দিন বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকেরা লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্তাধীন। কাজেই এই মুহূর্তে কিছুই বলা যাচ্ছে না। এ ছাড়া সহকারী প্রক্টর শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।