জাবি প্রতিনিধি:
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) মীর মশাররফ হোসেন হলে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমানকে অন্য হলে আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। কিন্তু ওই হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে ফুটেজ পাওয়া যায়নি। ফুটেজ বিলোপের নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর রহমান শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) রাত ১টা ১৫ মিনিটের দিকে মীর মশাররফ হোসেন হল থেকে রান্নাঘর সংলগ্ন গেট ভেঙে বের হয়ে যান। পরবর্তীতে রোববার সকাল সাড়ে আটটায় মূল অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর আশুলিয়া থানা কর্তৃক গ্রেপ্তার হন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের নির্দেশেই মোস্তাফিজুরকে পলায়নে সহায়তা করে মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের নেতা সাগর সিদ্দিকী এবং সভাপতির নির্দেশেই তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে আশ্রয় দেয়া হয়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলের চাপে ছাত্রলীগ সভাপতির নির্দেশে আত্মসমর্পণ করেন মোস্তাফিজ।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘সভাপতি সোহেল আমাকে জানায় মোস্তাফিজুর থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে চায়। আমি তখন তাকে বলেছি সেটা তার বিষয়। সে আত্মসমর্পণ করুক বা না করুক সে গ্রেপ্তার হবেই ’।
অভিযুক্ত মোস্তাফিজুর নিজে থেকেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছে- ছাত্রলীগ সভাপতি শুরুতে এমন দাবি করেন। কিন্তু যখন তাকে আবারো প্রশ্ন করা হয় আপনি কীভাবে জানলেন সে আত্মসমর্পণ করেছে যেখানে পুলিশ বলছে তাকে গ্রেপ্তার করেছে। তাহলে কী আপনি আগে থেকেই তার অবস্থা সর্ম্পকে জানতেন। এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না।
অভিযুক্ত ধর্ষককে আশ্রয় দেয়ার সময়কালের সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে চাইলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হল কর্তৃপক্ষ থেকে জানানো হয়, ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ঠা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের সকল সিসিটিভি ক্যামেরায় কোনো ফুটেজ রেকর্ড হয়নি। এর জন্য তারা যান্ত্রিক ত্রুটিকে দায়ী করেন। তবে সরেজমিনে সিসিটিভি সিস্টেম পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় জানুয়ারি মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত সকল ফুটেজ রয়েছে এবং ৫ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টা থেকে সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ড হচ্ছে। এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারেননি।
হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার বলেন, আমি ছুটিতে ছিলাম। হল ওয়ার্ডেন প্রভোস্টের দায়িত্বে ছিল। কারগরী ত্রুটির কারণে কয়েকদিন ধরে আমাদের সিসিটিভি কাজ করছে না। পরবর্তীতে সিসিটিভি ঠিক করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ গায়েবের মতো কোন ঘটনাই ঘটেনি।
উল্লেখ্য, শনিবার জাবির মীর মশাররফ হোসেন হলে বহিরাগত এক ব্যক্তিকে আটকে রেখে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হলসংলগ্ন জঙ্গলে ঘটা এই ঘটনায় অভিযুক্ত প্রধান আসামী ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুরকে পরদিন সকালে সাভারের একটি এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে দাবি করে পুলিশ। আর শনিবার রাতেই ধর্ষককে পালাতে সাহায্যকারীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযুক্তরা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র সাগর সিদ্দিকী ও হাসানুজ্জামান, শাহ পরান, মুরাদ এবং উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাব্বির হাসান।