জাবি প্রতিনিধি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সম্প্রতি ধর্ষণকাণ্ডে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত এবং প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদেরকে তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে মানববন্ধন করেছে ‘নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ’।
রবিবার (৩ মার্চ) দুপুর একটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার সংলগ্ন সড়কে এ মানববন্ধন হয়।
তাদের অন্য দাবিগুলো হলো- মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং র্যাগিং সংস্কৃতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা, ইতঃপূর্বে যৌননিপীড়ন সেলে উত্থাপিত সকল অমিমাংসিত অভিযোগসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে, মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে, জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণাপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
মানববন্ধনে সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব জামানের সঞ্চালনায় ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ বলেন,
আমরা দীর্ঘদিন যাবত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কে বলেছি মাদক, নিপীড়ন, র্যাগিং এর মতো বিষয়গুলো তদন্ত করুন।গত কিছুদিন আগে যে ঘটনা ঘটেছে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মান নষ্ট করেছে।যেখানে র্যাব বলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগেও ধর্ষণ হয়েছে,সে জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের তদন্ত করতে অনীহা কেন? বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর প্রভোস্ট ধর্ষক মুস্তাফিজুর কে পালাতে সহায়তা করেছে, অবিলম্বে তদন্ত করে প্রক্টর প্রভোস্ট কে বরখাস্তের দাবি জানাই।
দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ বলেন, মাহমুদুর রহমান জনিকে বরখাস্তের সাত কর্মদিবসের অধিক সময় পার হয়ে যাওয়ার পরেও এই বহিষ্কার আদেশ এখনো বের হয়ে আসেনি। এর পেছনে কি রহস্য কাজ করছে তা আমরা জানতে চাই। আমরা শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য এখনো আমরা আন্দোলন করছি, সেকারণে ভর্তি পরিক্ষার মধ্যে আমরা কোনো কর্মসূচি দেইনি। আজ আমরা আবারো সমবেত হয়েছি ভর্তি পরীক্ষার পরে, কারণ এখনো আমাদের দাবিগুলো পূরণ হয়নি। জনির বিরুদ্ধে যে রায় সিন্ডিকেট দিয়েছে তা কেন এখনো অফিস আদেশ হিসেবে নেয়া হয়নি সেই জবাব আমরা প্রশাসনের কাছে জানতে চাই। দাবি আদায়ে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ শেষ পর্যন্ত সংগ্রাম করে যাবে।
শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের পাঁচ দফা দাবির একটি দাবি (যৌন নিপীড়নের দায়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে মাহমুদুর রহমান জনিকে চাকরিচ্যুত) বাস্তবায়ন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। কিন্তু আমার কাছে উপাচার্যের নৈতিক মূল্যবোধ নিয়ে অনেকগুলো প্রশ্ন জেগেছে। যে তদন্তে জনিকে বরখাস্ত করা হয়েছে ওই তদন্তে মূল অভিযোগকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রীকে দায়মুক্তি আদায় বাধ্য করেছিল, চাপ প্রয়োগ করেছিল, প্রলোভন দেখিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। তদন্ত রিপোর্টে সে বিষয়গুলো এসেছে কি না আমাদের জানা নেই। এই ধরনের গর্হিত কাজ করার অপরাধে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেননি সেটা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই জানেন। প্রক্টর কোনোভাবেই এই অপরাধের দায় এড়াতে পারে না কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন বা সিন্ডিকেট তার এই অপরাধের শাস্তি দেন নাই। এই প্রক্টরকে শুধু অপসারণ করলে হবে না তার শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
মানবন্ধনে আরও বক্তব্য দেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রববানী, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়া, বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান লাবিব, ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আলিফ মাহমুদ প্রমুখ।