কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী যাত্রীবাহী নাইট কোচে ডাকাতদল উঠে যাত্রীদের হাত-পা চোখ বেঁধে মারধর, টাকা, মোবাইলসহ জিনিসপত্র লুট ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন এক নারী। ভুক্তভোগী সেই নারীর বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায়। সংসারের হাল ধরতে ঢাকায় গার্মেন্টসে কাজ করতে যাচ্ছিলেন বলে জানা গেছে।
ভুক্তভোগী সেই নারীর বাবা কৃষক, মা গৃহিণী। কাজের উদ্দেশ্যে ঢাকায় যেতে মেয়েকে তারা বারণ করেছিলেন। ওই নারীর বাবা গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার রাতে অনেকটা জোর করেই তার মেয়ে ঢাকায় যান। ঢাকায় যাওয়ার জন্য বারণ করেছিলেন তিনি।
টাঙ্গাইলের আড়াইশ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে পুলিশি নিরাপত্তায় চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী নারী জানান, তিনি একজন পরিবহন শ্রমিকের স্ত্রী।
তিনি বলেন, আমি কুষ্টিয়ার একটি জায়গা থেকে উঠি। সিরাজগঞ্জের হোটেলে রাত সাড়ে ১১টায় এসে পৌঁছলাম।খাওয়া-দাওয়া শেষে গাড়ি ছাড়ার পর ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী ৩টি ছেলে বাসে উঠে। তারা বলে- আমরার আরও লোক আছে সামনে। তখন আরও চারটা লোক উঠে। তার মধ্যে আরেকজন বলে, সামনে আমার আরও লোক আছে। সিরাজগঞ্জের মধ্যে আরও ছয়জন উঠে। তাদের পিছনে সিট দিয়ে দেয়। তাদের একজন আমার পাশে বসতে চায়। প্রথমে আমি মানা করি।
ধর্ষণের শিকার ওই নারী বলেন, পরে আবার যখন আসে, তখন আমি তাকে বলি আপনি হেলপারকে ডেকে সিট নেন। পরে সে আর সেই সিটে বসেনি। কিছুক্ষণ পর তারা সিগারেট খেয়ে ধোঁয়া দেয় আমাদের গায়ে।
ছিনতাইয়ের বর্ণনা দিয়ে শ্রী নারী বলেন, এর ১০ মিনিট পরই শুরু করে ছিনতাই। বাসচালকের কাছে গিয়ে তিনজন তাকে জিম্মি করে। চালকের গলায় ছুরি চেপে ধরে সিট থেকে উঠতে বলে। তারা গাড়ি চালাবে বলে জানায়। এর পর তাকে তুলে বেঁধে ফেলে। আমার পাশে বসা হেলপারকে তুলে নেয়। এর পর আমার সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে আমার হাত-মুখ চোখ বেঁধে ধর্ষণ করে। ছিনতাইকারীরা যার কাছে টাকা বেশি পাইছে তাকে কিছু বলেনি। সবার থেকে টাকা সব কিছু ছিনিয়ে নেয় তারা। এক মহিলা ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিল তার কাছে ৯ হাজার টাকা ছিল তাও নিয়ে নেয়।
পরে রাত সাড়ে ৩টার দিকে মধুপুরের রক্তিপাড়া জামে মসজিদের উল্টোপাশে মজিবরের বাড়ির সামনের বালির ডিবিতে বাস উঠিয়ে দিয়ে ডাকাত দল পালিয়ে যায়।
ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, রাতে বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য যাত্রা বিরতি দেয়। পরে দেড়টার দিকে আবার যাত্রা শুরু করে। পথে কাঁধে ব্যাগ বহনকরা ১০-১২ জন তরুণ যাত্রী উঠেন। তখন সবাই প্রায় ঘুমে। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ওই তরুণ দল অস্ত্রের মুখে একে একে ঘুমন্ত যাত্রীদের সবাইকে বেঁধে ফেলে। প্রত্যেক যাত্রীর চোখ ও মুখ বেঁধে চালককেও জিম্মি করে তারা বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়।
এ ঘটনায় বাসের এক যাত্রী অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১২ জনের বিরুদ্ধে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলা করেছেন। যাত্রীবেশে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী নাইট কোচে উঠে যাত্রীদের হাত-পা চোখ বেঁধে মারধর, সম্পদ লুট ও এক নারীকে ধর্ষণের ঘটনায় মূল হোতা রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ।
এই লোমহর্ষক ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং বাকি অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার৷