রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইস্যু নিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে চায় না বাংলাদেশ। এ জন্য সরকার সরল বিশ্বাসে (ইন গুড ফেইথ) মিয়ানমারের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রাখবে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের দিক থেকে একটা ইতিবাচক আচরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এটা আগে করেনি। তবে এটা কি সাময়িক বা এটার মধ্যে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা, সেটা আমাদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
গতকাল রোববার (১৯ মার্চ) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাইয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে কতটুকু ফলপ্রসু হবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন এ কথা জানান।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘মিয়ানমারের প্রতিনিধি দল এসেছে বলে আগামীকাল রোহিঙ্গারা রাখাইনে রওনা হবে বা পরশু দিন ওদের ঠেলে পাঠিয়ে দেয়া হবে, ব্যাপারটা এ রকম না। ১১ লাখ রোহিঙ্গা তো একদিনে, একরাতে বা এক বছরে ফিরে যেতে পারবে না। প্রধিনিধিদল এসেছে, তারা কাজ করছে। এরপর আরো অনেক পদক্ষেপ রয়েছে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, আমাদের দেখতে হবে রোহিঙ্গারা যেখানে ফিরে যাবে সেখানে সহায়ক পরিবেশ আছে কিনা, তাদের চলাফেরার স্বাধীনতা, শিক্ষা বা স্বাস্থ্যসেবা থাকবে কিনা। সেখানে আন্তর্জাতিক, বিশেষ করে আসিয়ান (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট) বা জাতিসঙ্ঘের উপস্থিতি থাকবে কিনা। এসবের সমন্বয় যখন হবে, তখন মিয়ানমার আমাদের সাথে বা রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ-আলোচনা করবে। তারপরই রোহিঙ্গাদের যাওয়ার কথা আসবে।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে সরকার আশাবাদী কিনা, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে আমরা আশ্রয় দিয়েছি। পাঁচ বছরের বেশি সময় তাদের দেখভাল করছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও আমাদের সাহায্য করছে। সুতরাং প্রত্যাবাসন টেকসই হবে, এ বিষয়ে নিশ্চিত না হলে বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাবে না।
তিনি আরো বলেন, প্রত্যাবাসনের পুরো পরিকল্পনা অর্থাৎ প্রথম ব্যাচের পরে দ্বিতীয় ব্যাচের কী হবে, ফেরত যেতে মোট কত সময় প্রয়োজন হবে, আমাদের সাথে মিয়ানমারের চুক্তিতে তা বলা আছে। কিন্তু প্রতিটি ধাপের উল্লেখ নেই। আমরা যখন প্রথম ব্যাচ পাঠানোর জন্য মিয়ানমারের সাথে সম্মত হবো, তারপরের পদক্ষেপগুলো কী হবে সেগুলো সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা নিতে হবে। তা না হলে প্রত্যাবাসন টেকসই হবে না।
তবে পরিস্থিতি অনুকূলে থাকলে এবছর বর্ষা মৌসুম শেষে বা শীতের শুরুতে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে বলে জানান তিনি।