ডেঙ্গু রোগীর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা বৃদ্ধিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালসহ রাজধানীর অনেক হাসপাতাল শয্যা স্বল্পতার কারণে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে।
২০১৯ সালে দেশে সবচেয়ে ডেঙ্গু প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছিল। এ বছরও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, এ পরিস্থিতিতে ঢাকার কোন হাসপাতালে শয্যা ফাঁকা নেই।
নগরীর বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হলি ফ্যমিলি হাসাপাতাল, মুগদা মেডিকেল হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা হাসপাতালসহ বেশকিছু হসপাতালে সিট ফাঁকা নেই। মেঝেতে বিছানা করে চিকিৎসা নিচ্ছে। মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত রোগীতে ওয়ার্ড ভর্তি হয়ে গেছে।
তবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে সংক্রমণের সংখ্যা কমতে শুরু করতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম।
তিনি বলেন, সারাদেশে প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। বাড়ছে মৃত্যু সংক্রমণ। সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর চাপ তৈরি হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার ডেঙ্গু বেড়েছে। এছাড়া সচেতনতার অভাবে মশাবাহিত রোগবালাই বেড়েছে।
চলতি বছরের ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ১২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘ডেঙ্গুর ভয়ঙ্কর লাগাম টেনে ধরতে জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা আবশ্যক। আমরা এ বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’
তিনি বলেন, জরুরি প্রয়োজনে ঢাকা উত্তর কর্পোরেশন হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ-এর একটি নতুন ইউনিট এবং লালকুঠি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, মশা নিধনে সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, মশার সংখ্যা কমলে রোগীর সংখ্যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যাবে ফলে হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর চাপ কম থাকবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির বলেন, প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালগুলোকে রোগীদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে নির্দেশ দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘প্রয়োজনে বিছানা এবং লজিস্টিক সহায়তা প্রদান করা হবে।’
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মোহাম্মদ আবদুস সবুর খান বলেন, সাধারণত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর তীব্রতা কমলেও এবার পরিস্থিতি উল্টো।
খান বলেন, ‘এখন অক্টোবর, কিন্তু ডেঙ্গু কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে নভেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত ডেঙ্গু থাকবে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, ডেঙ্গু প্রতিদিন যে হারে বাড়ছে তাতে মানুষের মধ্যে একটা আতংক কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখেছি ৪০ শতাংশ এডিস মশার প্রজনন হচ্ছে নির্মাণাধীন বিভিন্ন প্রকল্প থেকে। বাকিগুলো হচ্ছে বাসা বাড়ি ও আশপাশে জমে থাকা পানিতে। ডেঙ্গু থেকে মানুষ কে রেহাই পেতে হলে সিটি কর্পোরেশনগুলোর কার্যকরী অভিযানের পাশাপাশি মানুষ কে আরও সচেতন হতে হবে।
সরকারি প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১ জানুয়ারি থেকে ২৬ অক্টোবর ২০২২ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট ৩৩ হাজার ৯২৩ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। যেখানে ২০২১ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৮ হাজার ৪২৯ জন।
২০১৯ সালে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ছিল। সেই বছর এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল।
ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ ডেঙ্গু মোকাবিলার কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রথমত কেউ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে তাকে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে এবং প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া শুরু করতে হবে। কিছু লোক মনে করে যে হালকা জ্বর কোন ক্ষতি করবে না। এই চিন্তা বাদ দিতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অবশ্যই পরীক্ষা করতে হবে এবং কারো মধ্যে ডেঙ্গু শনাক্ত হলে তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।