নির্বাচনের মাঠে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারদের (এসপি) দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে
বলে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার(সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তিনি বলেন, এবার নির্বাচন কমিশন (ইসি) শক্ত অবস্থানে থাকবে। ডিসি, এসপিদের সঙ্গে বৈঠকে কমিশন এ বার্তা দিয়েছে।
শনিবার(৮ অক্টোবর) জেলা পরিষদ নির্বাচন ও অন্যান্য নির্বাচন নিয়ে সারাদেশের প্রতিটি জেলার ডিসি- এসপিদের নিয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন নির্বাচন কমিশন। এ সভা শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল ও জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব এসব কথা বলেন।
এ মতবিনিময়ে সভায় ডিসি-এসপি ছাড়াও অংশ নিয়েছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব আক্তার হোসেন ও অতিরিক্ত আইজিপি আতিকুল ইসলাম।
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনই আমরা চাই। সেই সঙ্গে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছি, দল নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। আমরা আশা করি নির্বাচন কমিশন অংশগ্রহণমূলক হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকলে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। মতবিনিময়ে সরকারি কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ইসি বলেছে, কোনো অবস্থাতেই নির্বাচন বিষয়ে কর্মকর্তাদের আচরণে এমন কিছু যাতে প্রতিফলন না হয়-যাতে জনগণ ভাবতে পারেন তাঁরা একটি দলের পক্ষে কাজ করছেন।
কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আপনারা আচরণে এমন কোন কিছু করবেন না যাতে সাধারণ জনগণ মনে করতে পারে আপনারা পক্ষপাতদুষ্ট। আপনারা দল নিরপেক্ষ নয়। আপনাদের অবশ্যই দল নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। আপনারা গণকর্মচারী হিসেবে সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে। কর্মে কখনো নিজেদের দলীয় কর্মী ভাববেন না বা মনে করবেন না।
সরকারি এ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও জানান, আপনাদের আচরণে এমন কিছু যেন প্রতিফলিত না হয় যে জনগণ মনে করে আপনারা কোন দলের পক্ষ হয়ে কাজ করছেন।
বৈঠকে ডিসি এসপিরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, তাঁরা বলেছেন, ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) বিষয়ে প্রচুর ‘ভোটার এডুকেশন’ দরকার। অনেকে প্রযুক্তি ভয় পান। এ কারণে অনেকে ইভিএম নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন। বেশি সংখ্যক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের স্বার্থে ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা কমিয়ে বুথ (ভোটকক্ষ) বাড়িয়ে দেওয়ার বিষয়ে তাঁদের পক্ষ থেকে প্রস্তাব এসেছে। ইসি এটি পর্যালোচনা করে দেখবে।
সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ অবস্থানের কারণে বিভাজন রয়েছে।
ইসি আশা করে রাজনৈতিক নেতৃত্ব তাঁদের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা দিয়ে রাজনৈতিক সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন জানিয়ে সিইসি বলেন, এটি কমিশনের কাজ নয়। রাজনৈতিক বিষয়ে ইসি অনুপ্রবেশ করতে পারে না। রাজনৈতিক সমস্যা রাজনীতিকদের সমাধান করতে হবে।
নির্বাচন অবাধ করার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে চেষ্টা করে। সংসদীয় ব্যবস্থা এমন যে সরকার ও দল আলাদা করা অনেক সময় কষ্টকর। অনেক সময় অলক্ষে প্রভাব চলে আসতে পারে। তবে নির্বাচন কমিশন এবার শক্ত অবস্থানে থাকবে।
তিনি বলেন, আচরণ বিধি মেনে গণকর্মচারী হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করতে হবে। দলীয় কর্মী হিসেবে নয়, সরকারি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। ইসি সেটা পর্যবেক্ষণ করবে।
নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়ে অন্য এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এর অধীনে বাহিনীগুলো আছে, প্রয়োজনে সেনাবাহিনীরও প্রয়োজন হতে পারে।
নির্বাচনের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা আছে তারা ইসির অধীনে থাকবে। ইসির যে কোন নির্দেশনা মানতে তারা বাধ্য থাকবে বলেও জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার৷