বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যখন দেশ এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন মুক্তিযুদ্ধে পরাজিত এবং দেশি-বিদেশি প্রতিক্রিয়াশীল অপশক্তি তাকে হত্যা করে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, এখন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যখন দেশ অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে, তখনও স্বাধীনতাবিরোধীরা জঙ্গিগোষ্ঠীকে সাথে নিয়ে দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানীর তোপখানা রোডে জাতীয় প্রেসক্লাবে জাতীয় পার্টি (জেপি) আয়োজিত ‘নির্ভীক সাংবাদিক ও দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী আলোচনা সভা’য় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, এই দেশবিরোধী অপশক্তির হাতে দেশকে তুলে দেওয়া হবে না। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
যেসব দেশবিরোধী অপশক্তি আন্তর্জাতিক শক্তির সাথে হাত মিলিয়ে দেশকে পিছিয়ে দিতে চাচ্ছে, তাদেরকে পরাভূত করতে হলে সমস্ত রাজনৈতিক শক্তি যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে আছেন, তাদের ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সেটি যদি আমরা কার্যকরভাবে করতে পারি, তাহলে আমাদের পক্ষে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভবপর হবে।
তিনি বলেন, দেশকে সমৃদ্ধির পথে, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ঠিকানায়, মানিক মিয়াদের স্বপ্নের ঠিকানায় আমরা পৌঁছাতে পারব।
জাতীয় সংসদে সদ্য প্রস্তাবিত আগামী ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের বাজেট প্রসঙ্গে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আজকে যে বাজেট প্রস্তাব করা হয়েছে, সেটি ২০০৯ সালের বাজেটের তুলনায় সাড়ে ৯ গুণ বেশি। ২০০৯ সালে আমাদের জিডিপির আকার ছিল একশ বিলিয়ন ডলার, আর আজকে জিডিপির আকার হচ্ছে ১ ট্রিলিয়ন ডলার প্লাস অর্থাৎ প্রায় ১০ গুণ।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে দেখবেন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে, বাজেটের পর গতানুগতিক একটা বক্তব্য দেবে, এটা গত ১৪ বছর ধরে দেখছি। তারা বলে, এই বাজেট উচ্চভিলাষী, বাস্তবায়নযোগ্য না, জনগণের কল্যাণ আনবে না – এইসব। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এই সকল বাজেট গত ১৪ বছর ধরে আমরা বাস্তবায়ন করেছি, বাস্তবায়নের হার ৯৭ শতাংশ। করোনা মহামারির মধ্যেও সব মিলিয়ে ৯৫ শতাংশের কাছাকাছি ছিল।
প্রয়াত সাংবাদিক মানিক মিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, পাকিস্তান সরকার ইত্তেফাক বন্ধ করে দিয়েছিল, মানিক মিয়াকে গ্রেফতারও করেছে। কতটুকু রোষানল থাকলে সেটি করা হয়! এই গ্রেফতার রাজনৈতিক কারণেই, অন্য কোনো অভিযোগ ছিল না। সুতরাং মরহুম মানিক মিয়া আমাদের স্বাধিকার আদায়ের আন্দোলন, যে পথ ধরেই স্বাধীনতা সংগ্রাম, সেই ক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রেখে গেছেন।
মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরীসহ আরও কয়েকজন আমাদের সাংবাদিকদের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে, মানুষের মুক্তির জন্য একজন সাংবাদিক বা একটা পত্রিকা যে কি অবদান রাখতে পারে সেটির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হচ্ছেন মরহুম মানিক মিয়া এবং তার পত্রিকা ইত্তেফাক।
জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাদেক সিদ্দিকী, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আআমস আরেফিন সিদ্দিক, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সভার সভাপতি জেপি মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মানিক মিয়ার মধ্যে খুব নিবিড় পারিবারিক সম্পর্ক ছিল। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে স্বাধীনতা আন্দোলনকে মানিক মিয়া প্রত্যক্ষভাবে সমর্থন দিয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে মাঠে ছিলেন বঙ্গবন্ধু, আর কলমে ছিলেন মানিক মিয়া।
অতিথিবৃন্দ তাদের বক্তব্যে মানিক মিয়ার অকুতোভয় সাংবাদিকতা এবং বাঙালি চেতনাকে সমুন্নত রাখার সংগ্রামের ওপর আলোকপাত করেন।