পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন কোনো বক্তি বা গোষ্ঠীর রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত না হতে। তিনি বলেন, যারা ধর্মকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করতে চায় তাদের বর্জন করুন।
রবিবার (১৯ মার্চ) শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ডিঙ্গামানিকের আহমদ নগর দাখির মাদরাসার বার্ষিক ক্রীড়া ও ইসলামী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এমনটা জানান।
এনামুল হক শামীম বলেন, একাত্তরের পরাজিত শক্তির একটি অংশ মিথ্যা, বানোয়াট, মনগড়া বক্তব্য দিয়ে ধর্মপ্রাণ সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে ইদানীং মাঠে নেমেছে। সমাজে অশান্তি সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। মাদরাসার সঙ্গে যুক্ত সবাইকে অনুরোধ জানাবো, যে সমস্ত ব্যক্তিবর্গ তাদের রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করার জন্য আপনাদের ব্যবহারের অপচেষ্টা করছে, তাদের বর্জন করুন, তাদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হবেন না এবং কোমল শিশু-কিশোর শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করবেন না।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু মানেই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর প্রশ্নে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে ও বাংলাদেশের প্রশ্নে কখনো আপোস করা যাবে না। জাতির পিতা ১৯৭২ সালে বলেছিলেন ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার না করতে। কিন্তু পরাজিত শক্তির দোসররা দেশকে আবার ৫০ বছর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে।
ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধ রক্ষা এবং প্রসারে যা করেছেন, ইসলামের নামে মুখোশধারী সরকারগুলো তা কখনই করেনি। আইন করে মদ-জুয়া-ঘোড়দৌড় নিষিদ্ধ করা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা, মাদরাসা বোর্ড স্থাপন, ওআইসির সদস্যপদ অর্জনের মতো কাজগুলো বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই বাস্তবায়িত হয়েছিল স্বাধীনতা অর্জনের মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার বহু কাজ করেছেন এবং ইসলামের খেদমতে তিনি যে সমস্ত কাজ করেছেন অতীতে তা কেউ করেনি। দেশে এই কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। প্রায় এক লাখ মসজিদে স্থাপিত মক্তবের আলেমদের প্রতিমাসে ভাতাও তিনি চালু করেছেন। সারাদেশে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে মসজিদ নির্মাণ প্রকল্পও তিনি বাস্তবায়ন করে চলেছেন। কওমি মাদরাসার স্বীকৃতি দিয়েছেন। সেখান থেকে পাস করা অনেককে সরকারি চাকুরিও দিয়েছেন।
নতুন প্রজন্ম হচ্ছে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের মূল সৈনিক এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, তাই তাদেরকে প্রাথমিক থেকেই স্মার্ট বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। ডিজিটাল প্রযুক্তির চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে না পারলে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা যাবে না। এজন্য নতুন প্রজন্মকে স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার বিকল্প নাই।
নিজ জেলায় শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশের ন্যায় শরীয়তপুরেও একইভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হচ্ছে। নড়িয়া-সখিপুরে সকল ননএমপিওভুক্ত স্কুল কলেজ ও মাদরাসা এমপিও ভুক্ত হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও শিক্ষার মান আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়েছে।
বাংলাদেশের মানুষ ধর্মপ্রাণ, ধর্মান্ধ নয় বলে মন্তব্য করে এনামুল হক শামীম বলেন, ধর্মকে রাজনীতির হাতিয়ার করবেন না। প্রত্যেকে নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার রাখেন। বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের রক্তের বিনিময়ে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এ বাংলাদেশ লালন শাহ, রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, জীবনানন্দের বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ শাহজালাল, শাহ পরান, শাহ মখদুম, খান জাহান আলীর বাংলাদেশ। এ বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এ দেশে ধর্মের নামে কোনো ধরনের বিভেদ-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে দেব না। ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখে এ দেশের মানুষ প্রগতি, অগ্রগতি ও উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাবে। জননেত্রী শেখ হাসিনা একজন খাঁটি মুসলমান। তিনি ধর্মে কর্মে বিশ্বসেরা। তাই আগামী নির্বাচনেও এদেশের মানুষ তাকে পঞ্চমবারের মতো ক্ষমতায় আনবেন।
মাদরাসার গভর্নিং বডির সভাপতি মো. আনোয়ার হোসাইন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন, সাদিয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ডা. কাজী মুজিবুর রহমান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান এমএ কাইউম পাইক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য জহির সিকদার, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলুল হক, উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান জাকির বেপারী, ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আজিজ সরদার, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান সিকদার প্রমুখ।