তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, আমিরসহ গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মী ও ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামী। আগামী ১ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশসহ দেশব্যাপী তিন দিনের কর্মসূচির ডাক দিয়েছে দলটি।
১ আগস্ট ঢাকায় সমাবেশের আগে আগামী ২৮ জুলাই সব মহানগরীতে এবং ৩০ জুলাই জেলা শহরে শান্তিপূর্ণ মিছিলের কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
সোমবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর এক মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি ও ভারপ্রাপ্ত আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ঘোষিত কর্মসূচি সফল করতে জামায়াতের সব জনশক্তি ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান আমিরে জামায়াত।
নতুন এই কর্মসূচি প্রসঙ্গে দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা, আমিরসহ গ্রেফতারকৃত সব নেতাকর্মী ও ওলামায়ে কেরামের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে এসব কর্মসূচি পালন করবে জামায়াত ইসলাম।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের শুরুতেই সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে অবিলম্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত বলেন, নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের জেলে আটক রেখে শূন্য মাঠে নির্বাচন করার প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। এটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।
তিনি বলেন, আর মাত্র ৫ মাস পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক করার জন্য কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে গোটা জাতি ঐক্যবদ্ধ। সরকার জনগণের এই দাবি বাস্তবায়নের পরিবর্তে ২০১৪ ও ২০১৮ স্টাইলে আবারো নির্বাচনের ষড়যন্ত্র করছে। এ লক্ষ্যে সরকার প্রশাসনকে ঢেলে সাজাচ্ছে। আরপিও সংশোধনের নামে কার্যত নির্বাচন কমিশনকে আরও আজ্ঞাবহ করে তুলছে।
জামায়াতে ইসলামীকে সভা-সমাবেশ ও মিছিল করতে দেওয়া হচ্ছে না দাবি করে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, প্রশাসনের নিকট বারবার লিখিতভাবে আবেদন জানানো সত্ত্বেও তারা সভা-সমাবেশ বাস্তবায়নে সহযোগিতার পরিবর্তে সিলেট এবং চট্টগ্রামে গ্রেপ্তার ও হয়রানি করে যাচ্ছে। দেশে যাতে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হয়, সেজন্য জামায়াতের আমিরসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে আটক করে রেখেছে।
তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে নির্বাচন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ রূপে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। এ সরকারের আমলে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ কোনো নির্বাচনই অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ হয়নি। গত ১৭ জুলাই ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে সরকারের আচরণ প্রমাণ করেছে, এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনই অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারে না।
নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য জাতিকে হতাশ করেছে দাবি করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী বারবার বলে আসছে কেয়ারটেকার সরকার ব্যতীত জনগণ তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিজেদের পছন্দমত প্রার্থী নির্বাচিত করতে পারবে না। সরকারের মন্ত্রী ও এমপিরা সংবিধানের দোহাই দিয়ে মূলত নিজেদের নিয়ন্ত্রণে একটি প্রহসনের নির্বাচনের কথাই বারবার ঘোষণা করছেন। তারা আরো বলছেন যে, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হলেই হবে, অংশগ্রহণমূলক না হলেও চলবে। এ সব কথার দ্বারা তারা একতরফা নির্বাচনের ষড়যন্ত্রের কথাই ব্যক্ত করছেন। জনগণ সরকারের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হতে দিবে না, ইনশাআল্লাহ।
ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসন, জুলুম-নিপীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যা, গুম-খুন ও বিরোধী দলকে মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের সাংবিধানিক রাজনৈতিক অধিকার বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করায় দেশের জনগণ সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সোচ্চার হয়েছে। জনগণের মধ্যে এ সরকারের কোনো জনপ্রিয়তা নেই বললেই চলে। তারা রাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, দলটির নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এ টি এম মাসুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক অ্যাডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর নুরুল ইসলাম বুলবুল, ঢাকা মহানগরী উত্তরের ভারপ্রাপ্ত আমীর আ.রহমান মুসা, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারী ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ, ঢাকা মহানগরী উত্তরের সেক্রেটারি ড.মুহাম্মদ রেজাউল করিম ও ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।