যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামে প্রেমিকার বাড়িতে মধ্যরাতে দেখা করতে গিয়ে ইলিয়াস হোসেন (১৯) নামে এক কলেজছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। তার মৃত্যু ঘিরে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। আত্মহত্যা নাকি খুন এটি নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য আসছে।
শনিবার (৩০ এপ্রিল) রাত ৩টার দিকে ঝিকরগাছা উপজেলার শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের আয়নাল হক দফাদারের বাড়ির জানালার পাশ থেকে ইলিয়াসের লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনা অভিযুক্ত তরুণীর পরিবারের বলছে, আত্মহত্যা করেছে তরুণ ইলিয়াস। আত্মহত্যার দাবি মানতে নারাজ ইলিয়াসের পরিবার। তাদের ভাষ্য, ইলিয়াসকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
ইলিয়াস হোসেন শ্রীচন্দ্রপুর গ্রামের ফারুক হোসেনের ছেলে ও চৌগাছার পাশাপোল আমজামতলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার একটি মেয়ের সঙ্গে প্রতিবেশী ফারুক হোসেনের ছেলে ইলিয়াস হোসেনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তাদের দুইজনের তিন বছরের প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি এলাকার অনেকেই জানতেন। শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে যান ইলিয়াস হোসেন।
ঘরের জানালা দিয়ে তারা দুজন কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে ইলিয়াস পড়ে যান। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত তরুণীর জানিয়েছে, ইলিয়াস রাতে তার সঙ্গে কথা বলতে এসেছিল। তাকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয় তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখা সম্ভব নয়। তাকে বাড়িতে চলে যেতে বলা হয়। একপর্যায়ে ইলিয়াস জানালা দিয়ে হাত ভেতরে দিয়ে তার ওড়না কেড়ে নেয়। সেই ওড়না পেঁচিয়ে বাইরে থেকে জানালায় গলায় ফাঁস দেয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে সে ওড়না কেটে দেয়। ইলিয়াস নিচে পড়ে যায়। এরপর তাদের এক বন্ধুকে ফোন করে খবর দেওয়া হয়। এরপর লোকজন এসে ইলিয়াসের লাশ উদ্ধার করেন।
নিহতের বন্ধু ইয়াসিন বলেন, ওই মেয়ে আমাকে ফোন করে। ফোনে খবর পেয়ে এসে দেখি লাশের পাশে মেয়েটি কাঁদছে। আমি ইলিয়াসের ভাইয়ের পালস চেক করে দেখি চলছে না। এরপর তাএ আম্মুকে খবর দিই। তারা দৌড়ে এসে দেখেন লাশ পড়ে আছে। ঘটনাস্থলে দড়ি বা অন্য কিছু দেখিনি।
গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান বলেন, ওই ছেলের সঙ্গে মেয়েটির তিন বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে শুনেছি। তাদের সম্পর্কটা পরিবার থেকে মেনে নেয়নি। শনিবার দিবাগত রাতে মেয়েটি ওই ছেলেকে ফোনে ডেকেছিল। সেখানে যাওয়ার পর তার লাশ উদ্ধার হয়েছে।
তিনি বলেন, হত্যা নাকি আত্মহত্যা সেটি পরিষ্কার নয়। সুষ্ঠু তদন্তে ঘটনাটির রহস্য উদঘাটন হোক। দোষী হলে তাদের শাস্তি হোক। আর নির্দোষ হলে কেউ যেন হয়রানির শিকার না হয়।
ঝিকরগাছা থানার ওসি জানান, খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের সুরতহাল রিপোর্ট করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মেয়েটিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষ হলে ছেলেটির মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।