নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতির চাপের কারণে মানুষ অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বাংলাদেশ বিজনেস সামিট-২০২৩’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উচ্চমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতির চাপের কারণে মানুষ অত্যন্ত কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। কোভিড-১৯ মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর পাশাপাশি উন্নত দেশগুলোও মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে আনার উপায় খুঁজে বের করতে হবে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে।’
বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের দ্বিতীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথম মেয়াদে ব্যবসা-বাণিজ্যের দ্বার আমি বেসরকারি খাতের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলাম। এটি তখনকার যুগে একটা সাহসী সিদ্ধান্ত ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল একটি দেশে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছি। একসময়কার বাংলাদেশ দারিদ্র্যপীড়িত বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ বলে পরিচিতি পেত। তবে এখন আর সেই অবস্থা নেই। এখন বাংলাদেশ বিশ্বের ৩৫তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। উন্নয়নের রোল মডেল।
২০০৬ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, আমরা সেটি কমিয়ে ২০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কোভিড মহামারি যদি না আসত, অর্থনৈতিক মন্দা যদি না হতো, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে যে অর্থনৈতিক মন্দা যদি না হতো, তা হলে আমরা আরও অন্তত ২-৩ ভাগ দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হতাম।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) সহযোগিতায় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে।
যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব, চীন, ভুটান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ সাতটি দেশের মন্ত্রী, ১২টি বহুজাতিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ১৭টি দেশের দুই শতাধিক বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এই বিজনেস সামিটে অংশ নিচ্ছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান, সৌদি আরবের বাণিজ্যমন্ত্রী ড. মাজিদ বিন আবদুল্লাহ আল কাসাবি, ভুটানের বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী কার্মা দর্জিয়া এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) উপ-মহাপরিচালক জিয়াংচেন ঝাং অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন। এছাড়াও অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
এফবিসিসিআই’র ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে বৈশ্বিক দরবারে তুলে ধরার মাধ্যমে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে বিজনেস সামিটের আয়োজন করা হয়েছে।
এই বিজনেস সামিটে গতিশীল বিনিয়োগের সুযোগ ও স্থানীয় ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি প্রদর্শন করা হবে এবং নীতি নির্ধারণের উন্নতির জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ অগ্রাধিকার সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করা হবে।