বেঞ্চে বসা নিয়ে ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ পূর্ব বিরোধের জের ধরে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল বুধবার (২২ মার্চ) রাত সাড়ে আটটার দিকে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হল ও বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দফায় দফায় চলা এ সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক শিক্ষকসহ উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
পাল্টাপাল্টি হামলা ও সংঘর্ষ চলাকালে ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হলের কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর করা হয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। তবে সংঘর্ষ বন্ধ থাকলেও উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে বলে জানিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা–কর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সিনিয়র-জুনিয়র বিরোধ নিয়ে বুধবার দুপুর ও বিকেলে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নেতা মোহাইমিনুল ইসলাম ওরফে নুহাশ ও নজরুল ইসলাম ওরফে নাঈমের অনুসারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনার জের ধরে বিকেল থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। যার জের ধরে বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে প্রথমে উভয় পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে পাল্টাপাল্টি হামলায় লিপ্ত হয়। এ সময় একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে উভয় পক্ষের সাত-আটজন আহত হন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, সংঘর্ষের খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা সেখানে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর উভয় পক্ষ আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ আবদুস সালাম হলের সামনে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেখানেও উভয় পক্ষ একে অপরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং ভাষাশহীদ সালাম হলের কয়েকটি কক্ষে ভাঙচুর চালায়। সংঘর্ষ চলাকালে কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। তবে শব্দগুলো ককটেল বিস্ফোরণ না গুলির, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা জানান, সালাম হলের সামনের ঘটনায় ইটের আঘাতে একাধিক শিক্ষকসহ অন্তত ১২ জন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। আহত শিক্ষকদের মধ্যে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন রয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া হামলায় ইটের আঘাতে আহত ছাত্রদের কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তাঁরা হলেন কাজী ফয়সাল, তুষার, পিয়াল, তারেক ও আকন্দ রনি। আহত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে মেডিকেল সেন্টারে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
পুনরায় সংঘর্ষের বিষয়ে জানার জন্য ফোন দেওয়া হলেও ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ফোন ধরেননি। তবে অপর পক্ষের নেতা মোহাইমিনুল ইসলাম রাত পৌনে ১১টার দিকে বলেন, ভারপ্রাপ্ত প্রক্টরসহ তাঁরা বিরোধ মীমাংসা বৈঠকে বসেছেন।
ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ইকবাল হোসেন বলেন, বুধবার রাত সাড়ে আটটার দিকে পুনরায় উভয় পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়েছে। তারা পুলিশকে খবর দেওয়ার পর পুলিশ ক্যাম্পাসে আসে। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। ইটের আঘাতে আক্তার হোসেন নামের একজন শিক্ষক আহত হয়েছেন। আবাসিক হলে ভাঙচুরের শব্দ শোনা গেছে। ভেতরে কী অবস্থা, তা ভেতরে না গিয়ে নিশ্চিত করে বলা যাবে না। তিনি এবং সহ–উপাচার্য ঘটনাস্থলে রয়েছেন।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত সুধারাম থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমান পাঠান বলেন, সিনিয়র-জুনিয়র বসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত। বিক্ষিপ্তভাবে ইটের আঘাতে উভয় পক্ষের কিছু শিক্ষার্থী আহত হতে পারে। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা উভয় পক্ষকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তের আলোকে এ বিষয়ে পরে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।