চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ছোট কুমিরা এলাকায় ইউনিটেক্স স্পিনিং মিল লিমিটেডের তুলার গুদামে গতকাল শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ৯টি ইউনিট, সেনাবাহিনীর ৪টি, নৌবাহিনীর ৪টি, বিমানবাহিনীর ২টি, বিজিবির ৪টি ফায়ার ফাইটিং ইউনিটসহ ২৩ ইউনিটের প্রায় ২২ ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস। আজ রোববার সকাল সাড়ে আটটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান বলেন, গুদামটিতে ঝালাইয়ের কাজ করার সময় আগুন লাগে। এরপর মুহূর্তেই আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধ্যায় তিনি ঘটনাস্থলে এসে আগুনের ভয়াবহতা দেখে সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী এবং বিজিবির ফায়ার ইউনিটের সহযোগিতা চান। তুলার গুদামটিতে ২ হাজার ৭০০ টন আমদানি করা তুলা ছিল বলে জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, সকাল সাড়ে আটটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। এখন চলছে ডাম্পিংয়ের কাজ। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভে যাওয়ার ঘোষণা দিতে পারার আশা করছেন তাঁরা। এরপর ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলোকে গুরুত্ব অনুসারে তুলে নেওয়া হবে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলের আশপাশের পানির উৎস শেষ হয়ে যাওয়ায় আগুন নেভাতে বিপাকে পড়েছিলেন তাঁরা। দু–তিন কিলোমিটার দূরের পুকুর থেকে পানি আনতে হয়েছে। তুলার আগুন খুব সহজে নেভে না। এ কারণে সময় বেশি লেগেছে।
বিমানবাহিনীর ফায়ার ইউনিটের কমান্ডার নাদেরুজ্জামান বলেন, তাঁরা এসে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করেছেন। দূর থেকে পানি এনে আগুন নির্বাপণে কাজ করেছেন। এখন আর দৃশ্যমান কোনো আগুন নেই। আগুন পুরোপুরি নির্বাপণ হওয়ার পথে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহাদাত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আজ থেকে তারা তদন্তকাজ শুরু করবেন। ওয়েল্ডিং থেকে আগুনের সূত্রপাত, বিষয়টিকে সামনে রেখে কাজ শুরু করবেন তারা। এখন ফায়ার সার্ভিস ও বিমানবাহিনীর ফায়ার ইউনিটের সদস্যরা কাজ করছেন। আগুন নিয়ন্ত্রণ আসার পর সকাল আটটার দিকে অন্য বাহিনীর সদস্যরা ফিরে গেছেন।
এ ঘটনার তদন্তে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক বদিউল আলমকে প্রধান করে ১০ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। তাদেরকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোরশেদ হোসেন চৌধুরী বলেন, সিপি কারখানাটি বন্ধ হওয়ার পর স্থানীয় জাহাজভাঙা কারখানা এস এল স্টিলের মালিক লোকমান হোসেন সেটিকে কিনে নেন। কিন্তু তিনি ব্যবসা করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ট্রেড লাইসেন্সসহ সরকারি কোনো কাগজপত্র নেননি। পরে তিনি গুদামটিকে ইউনিটেক্স স্পিনিং মিলস লিমিটেডের কাছে ভাড়া দিয়ে দেন।
এর আগে গত ৪ মার্চ বিকেলে সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কেশবপুর এলাকার সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন। গত বছরের ৪ জুন বিএম কনটেইনার ডিপোতে রাসায়নিকের কনটেইনারে বিস্ফোরণে ৫০ জন নিহত ও ২ শতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছিলেন।