তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকেই বন্দী করা হয়েছিল এবং ২০০৮ সালের ১১ জুন তার মুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রও মুক্তিলাভ করেছে।
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার ক্ষমতার দরকার নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য তাকে দরকার। এই দেশকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছানোর জন্য শেখ হাসিনাকে দরকার। আমরা সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব যদি মানুষকে জিম্মি করা, বিভ্রান্তি ছড়ানো, জ্বালাও-পোড়াও করা এবং নেতিবাচক রাজনীতি বন্ধ হয়। তাই যারা এ কাজগুলো করছে তাদের শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রতিহত করতে হবে।’
তথ্যমন্ত্রী আজ দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কারাবরণ দিবস’ উপলক্ষে আলোচনা সভা’য় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল প্রমুখ।
তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা তৎকালীন সেনাসমর্থিত এক-এগারোর সরকারের সকল অন্যায়, অবিচার এবং দুর্নীতির একমাত্র আপোষহীন প্রতিবন্ধক ছিলেন বলেই তাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেদিন প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শুধু একজন ব্যক্তি শেখ হাসিনাকেই গ্রেপ্তার করা হয়নি, দেশের গণতন্ত্রকে বন্দী করা হয়েছিল, গণতন্ত্রের পায়ে শেকল পরানো হয়েছিল।
তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি, অনাচার-অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিল। স্বাভাবিকভাবেই ধারণা করা হয়েছিল, যারা দুর্নীতিতে পরপর পাঁচবার দেশকে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল, হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করে সমান্তরাল সরকার পরিচালনা করেছে, দেশকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য বানিয়েছিল, সেই বিএনপি জামায়াতের বিরুদ্ধে তারা অবস্থান গ্রহণ করবে। কিন্তু আমরা অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, যে স্লোাগান ও বক্তব্য দিয়ে তারা সরকার গঠন করেছিল, তারাই আবার সেই অন্যায়-অবিচারের মধ্যে যুক্ত হয়ে গেল।’
এক-এগারোর সময়ের কথা উল্লেখ করে ড. হাছান বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যাকে গ্রেপ্তারের ক’দিন পর বেগম খালেদা জিয়ার পার্সোনাল উইংয়ের একজন কর্মকর্তা আমাকে ফোন করে বললো, আমাদের ম্যাডামও তো গ্রেপ্তার হতে পারেন, একসাথে কিছু করতে পারলে ভালো। আমি জবাব দিয়েছিলাম, এই সিদ্ধান্ততো দলীয়ভাবে হতে হবে। আমার মনে হয়েছিল সেটা সমীচীন হবে না, কারণ আমরা বিএনপির অনাচার-অবিচার, অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধেও আন্দোলন করছিলাম। বাস্তবতা হচ্ছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা শেষ পর্যন্ত আন্দোলনে নামে নাই।’ তখন আমাদের দলের অনেক বড় নেতা বেসুরে কথা বলেছেন, কিন্তু তৃণমূলে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান বলেন, ‘সে সময় আমাদের শ্রদ্ধাভাজন নেতা জিল্লুর রহমান অত্যন্ত দক্ষতা ও বিচক্ষণতার সাথে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। নেত্রী যখন কারাগারে তখন জিল্লুর রহমান ছিলেন আমাদের অফুরন্ত প্রেরণার উৎস। তাঁর সাথে ছিলেন শেখ রেহানা ও সজীব ওয়াজেদ জয়। দল ঐক্যবদ্ধ ছিল বিধায় কর্মীদের মনে আশা ছিল। কর্মীরাও ঐক্যবদ্ধ ছিল। সারাদেশ এবং বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদ হয়েছে।’
দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ এবং যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার মানসিকতা লালন করার আহবান জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘২০০৮ সালে দল ঐক্যবদ্ধ ছিল বিধায় নেত্রীকে মুক্ত করতে পেরেছিলাম। আগামী নির্বাচনেও যদি দল ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে, ইনশাল্লাহ ২০০৮ সালের মতো ধস নামানো বিজয় আসবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না।’