বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের নাম ভাঙিয়ে শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন গণ অধিকার পরিষদের সদস্যসচিব নুরুল হক নুর। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার নাম ভাঙিয়ে তারা দুজনই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন।
শনিবার গণ অধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় দলটির কেন্দ্রীয় সদস্যসচিব নুরুল হক নুর এ মন্তব্য করেন।
বহুল সমালোচিত ইভিএম প্রসঙ্গে নুরুল হক নুর বলেন, ইভিএম মেশিন হচ্ছে ইলেকট্রনিক ভেলকি মেশিন। জনগণ ভবিষ্যতে এই মেশিনের মাধ্যমে বাটপারি ও প্রতারণার নির্বাচন হতে দেবে না। বাটপারি নির্বাচন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রধানমন্ত্রী ভ্যানিটি ব্যাগের টিস্যু পেপারকে নির্বাচন কমিশনের টেবিলে এনে বসিয়েছেন।
জেলা পরিষদ মিলনায়তনে ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন হবিগঞ্জ জেলা কমিটির আহ্বায়ক চৌধুরী আশরাফুল বারী নোমান। সদস্যসচিব আবুল হোসেন জীবনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন উপজেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
নুরুল হক নুর বলেন, নির্বাচন কমিশন যত ভালো সার্ভিস দিক না কেন, এ সরকার কোনো দয়া দেখাবে না, টিস্যু পেপারের মতো কমিশনকে ছুড়ে ফেলে দেবে।
নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক সংকটের সময় বাটপারি ইভিএম মেশিনের কথা ভুলে যান। বিগত দিনের ভোট চুরি ও ডাকাতির নির্বাচন ভবিষ্যতে হতে দেবে না জনগণ।
নুর বলেন, দেশে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সংকট চলছে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ওপর জনগণের আস্থা নেই। সৎ ও আদর্শবাদী কোনো নেতা জনগণের সামনে নেই। তাই গণ অধিকারের মতো সংগঠনের জন্ম হয়েছে।
সাবেক এই ছাত্রনেতা বলেন, ২৫ থেকে ৩০ পার্সেন্ট মানুষ বিএনপি আওয়ামী লীগের পক্ষে রাজনীতি করেন। ৭০ ভাগ মানুষ কোনো দলের সঙ্গে জড়িত নয়। আমরা ৩৫ থেকে ৪০ পার্সেন্ট মানুষের সমর্থন আদায় করতে পারলে ভবিষ্যতে সরকার গঠন করতে পারব ইনশা আল্লাহ।
নুর আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিকট আত্মীয় বলছেন, বঙ্গবন্ধুর মতো শেখ হাসিনাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। এতে বোঝা যায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মতো লোকজন আজ প্রধানমন্ত্রীকেও চারপাশে ঘিরে রেখেছে। আমরা হত্যার রাজনীতি চাই না। কারণ বঙ্গবন্ধুর মতো একজন তেজস্বী রাজনীতিবিদকে হত্যা করেই বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের মতো একজন লিডারকে হত্যা করে এ বাংলাদেশকে পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে আমরা সম্মান করি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু ও জিয়ার নাম ভাঙিয়ে তারা দুজনই জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। আইয়ুব ও এরশাদ সরকারের আমলেও ডাকসুর নির্বাচন হয়েছে। মেধাবী ছাত্ররাজনীতিতে আসার সুযোগ পেয়েছিল। আজ দেশে ছাত্ররাজনীতি নাই। হোন্ডা আর গুন্ডা দিয়ে রাজনীতি চলছে। ছাত্রদের হাতে এখন অস্ত্র আর কালো টাকা তুলে দেওয়া হয়েছে। এই বাংলাদেশকে পরিবর্তনের জন্যই আজ গণ অধিকার পরিষদের মাধ্যমে তারুণ্যের রাজনীতি উদ্ভব হয়েছে। এই তারুণ্যের রাজনীতির মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশকে বিনির্মাণ করতে চাই। শুধু ক্ষমতা পরিবর্তন হলেই মানুষের শান্তি আসবে না। সরকার এবং শাসন ব্যবস্থা দুটোরই পরিবর্তন করতে হবে।
তিনি বলেন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়া মেধাবী মানুষ ছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিকে সাজিয়েছিলেন। ২০০৫ সালে গ্রেনেড মেরে হত্যা করা হয়েছে। সে সময় আওয়ামী লীগ বলেছিল বিএনপি হত্যা করেছে। বিএনপি যদি হত্যা করেই থাকে তাহলে ১৩ বছর ধরে ক্ষমতায় পরও কেন কিবরিয়া বিচার হচ্ছে না?
এসময় নুর বলেন, আমরা ক্ষমতায় গেলে শাহ এ এম এস কিবরিয়া , বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনা অফিসার হত্যা এবং শাপলা চত্বরে আলেম ওলামা হত্যা ও লাশ গুমের বিচার করব। আরবে এক সময়ে ছিল আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগ ছিল। এখন বাংলাদেশেও আওয়ামী জাহেলিয়াত যুগ চলছে। জনগণ কথা বলতে পারছে না, স্বাধীনভাবে মানসম্মান নিয়ে বাঁচতে পারছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে দেশ দুর্ভিক্ষের যাচ্ছে। উন্নয়নের কথা বলে বর্তমান সরকার আফ্রিকার ব্যর্থ ও অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।