জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের (জিএম কাদের) বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে ইলেকশন নয় সিলেকশন হতে পারে। বর্তমান সরকার দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা তছনছ করে রাজনৈতিক সংস্কৃতি ধ্বংস করেছে। একদলীয় সরকার ব্যবস্থা কায়েম করতে চাচ্ছে।
তিনি বলেন, পেশাদার ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোতে এখন আর নির্বাচন হয় না, সিলেকশন করে দেয়া হচ্ছে। গণতান্ত্রিক ধারা ধ্বংস করে কর্তৃত্ববাদী এক নায়কতন্ত্র চালু করেছে। আগামী নির্বাচনেও যদি এভাবে চলতে থাকে তাহলে আর রাজনীতি বা রাজনৈতিক দল থাকবে না। দেশ এক নেতার অধিনে চলে যাবে, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করা হবে। দেশের মানুষ তাদের অধিকার হারিয়ে ফেলেছে, এভাবে চলতে থাকলে দেশের মানুষের অধিকার বলতে কিছুই থাকবে না।
রোববার (২৩ জুলাই) বনানী জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক যোগদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, আমরা সংবিধান ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার বুঝি না, সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন ব্যবস্থা সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে নিতে চাই। যাতে নির্বাচনে সরকার কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারে। আমরা ফর্মুলা দিতে পারি, সকল দল থেকে ফর্মুলা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। নির্বাচন ব্যবস্থা অবশ্যই সরকারের প্রভাবমুক্ত করতে হবে। বর্তমান সরকারের অধীনে ইলেকশন নয় সিলেকশন হতে পারে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, সরকার বলেছে- সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে, তাদের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু সরকার ছাড়া সব রাজনৈতিক শক্তি ও সাধারণ মানুষ বলছে- দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে বিশ্ববাসী দেখেছে- দলীয় সরকারের অধীনে কেমন নির্বাচন হয়। এই নির্বাচনে জনগণের কোনও সম্পৃক্ততা ছিল না।
তিনি বলেন, সরকার বলছে- ১১ শতাংশ ভোট পড়েছে, সাধারণ মানুষের ধারণা শতকরা ৫ ভাগ ভোটও পড়েনি। ভোট যা পড়েছে তার প্রায় সবই তারা নিজেরাই দিয়েছে। জনগণ এই ভোটের ওপর আস্থা রাখেনি তাই তারা ভোটেও অংশ নেয়নি। নির্লজ্জভাবে এক প্রার্থীকে মেরে, এজেন্টদের বের করে দিয়ে নির্বাচনকে কলুষিত করেছে। সারাবিশ্বের কাছে প্রমাণ হয়েছে বর্তমান সরকারের অধীনে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কেমন হবে।
ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনের পর নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলার মুখ সরকারের নেই বলে দাবি করে জিএম কাদের বলেন, আন্দোলনে রাস্তায় নামলে নির্যাতন করা হচ্ছে। সরকার বিরোধীদের দমন করতে সবকিছুই করছে। মানুষকে মানুষ মনে করে না, বিরোধীদের ওপর পাখির মতো গুলি করা হয়। বর্তমান সরকারের দমন নীতিতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক শক্তির টিকে থাকা সম্ভব নয়।
অর্থ ও জনবল না থাকলে মাঠে টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়েছে বলে মন্তব্য করে সাবেক এই মন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৪ সালের পর থেকে জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছে। পার্টির স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড বিঘ্নিত করেছে আওয়ামী লীগ। এ কারণে, জাতীয় পার্টি অনেকটা দুর্বল হয়েছে। আমরা এই অবস্থা থেকে বের হতে চাই।
বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে সবচেয়ে বেশি দুর্বল করেছে বলে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসাতে সমর্থন দিয়েছিল জাতীয় পার্টি। তারপর থেকে আওয়ামী লীগ সবসময় জাতীয় পার্টিতে বিভক্তি সৃষ্টি করে রেখেছে।
সরকার বিরোধীদের দমন করতে সব কিছুই করছে উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, আন্দোলনে রাস্তায় নামলে নির্যাতন করা হচ্ছে। মানুষকে মানুষ মনে করে না, বিরোধীদের ওপর পাখির মত গুলি করা হয়। বর্তমান সরকারের দমন নীতিতে স্বাভাবিক রাজনৈতিক শক্তির টিকে থাকা সম্ভব নয়। তাই অর্থ ও জনবল না থাকলে মাঠে টিকে থাকা দুরূহ হয়ে পড়েছে।
জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান বলেন, নিজেদের একটি দেশের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম হয়েছিল। বীর শহীদরা জীবন দিয়ে একটি দেশ সৃষ্টি করেছে, যে দেশের মালিক হবে সাধারণ জনগণ। তারা প্রতিনিধি নির্বাচন করে দেশ পরিচালনা করবে। যদি প্রতিনিধিরা জনগণের ইচ্ছে মত দেশ চালাতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ভোটের মাধ্যমে আবারো প্রতিনিধি পরির্বতন করবে সাধারণ মানুষ। এই হচ্ছে দেশের মালিকানা। দেশের মালিকরা প্রতিনিধিদের সমালোচনা করবে, এটা অধিকার নয়, এটি জনগণের কর্তব্য। মানুষ যদি সরকারের ভয়ে কথা বলতে না পারে, সেই সরকার জনগণের সরকার নয়। আমরা জনগণের ভোটে জনগণের সরকার চাই। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থা চাই আমরা।
টাঙ্গাইল জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আব্দুস সালাম চাকলাদারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন- পার্টির মহাসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজিবুল হক চুন্নু, টাঙ্গাইল জেলা সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক প্রমুখ।