ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান হৃদয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মেহেদী হাসান লেলিন এ কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত৷
বুধবার(৫ অক্টোবর) সকাল ১১টায় জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ তুলেছেন শহরের মধ্যপাড়ার শান্তিবাগ পঞ্চায়েত কমিটির নেতাসহ এলাকাবাসী।
পঞ্চায়েত কমিটির অর্থ সম্পাদক ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, শহরের মধ্যপাড়া শান্তিবাগ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে মাদকের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান হৃদয় ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য মেহেদী হাসান লেলিনের নেতৃত্বে একটি চক্র প্রকাশ্য এখানে মাদকের ব্যবসা পরিচালনা করছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, হৃদয়ের বাবা প্রয়াত রফিকুল ইসলামও ছিলেন শহরের একজন চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। হৃদয়ের মা মর্জিনা বেগম মনাও মাদক ব্যবসা করছেন। এতে শান্তিবাগ এলাকা থেকে শান্তি চলে গেছে। এলাকায় প্রকাশ্যে ইয়াবা ও ফেনসিডিল বিক্রির ফলে উঠতি বয়সের যুবসমাজ নেশায় আসক্ত হয়ে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে।
এলাকাকে মাদকমুক্ত করতে পঞ্চায়েত কমিটি নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয় জানিয়ে তিনি বলেন, এরই ধারাবাহিকতায় চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পুরো এলাকায় সিসি ক্যামেরা লাগাতে এলাকাবাসীকে নিয়ে সভা করা হয়। পরে সেই সভায় লেলিন ও হৃদয়ের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা হামলা করে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তাদের প্রধান সহযোগী এমরানকে মাদকসহ রাস্তা থেকে আটক করেন পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যরা।
ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, এ খবর জানতে পেরে লেলিন ও হৃদয়ের নেতৃত্বে মাদক ব্যবসায়ীরা পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যদের বাড়িতে হামলা করে এমরানকে ছিনিয়ে নেয়। হামলায় পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন আহমেদ, জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
এ ঘটনায় ১৯ ফেব্রুয়ারি পঞ্চায়েত কমিটির অর্থ সম্পাদক ইলিয়াছ চৌধুরী বাদী হয়ে লেলিন, হৃদয়সহ ১২ জনের বিরুদ্ধে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ সময় পঞ্চায়েত কমিটির অভিযোগ, এ মামলায় হৃদয়ের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাকে গ্রেপ্তার করছে না।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে মাদক ব্যবসায়ীরা পঞ্চায়েত কমিটির সদস্যদের বাড়িতে হামলা চালায়। এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে গণপিটুনিতে মাদক ব্যবসায়ী আশিকুর রহমান হৃদয় আহত হয়। মাদক ব্যবসায়ীদের হামলায় পঞ্চায়েত কমিটির বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন।
পঞ্চায়েত কমিটির এই মুখপাত্র বলেন, মাদক বিক্রির ঘটনায় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন হামলার শিকার জেলা শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুমন আহাম্মদ, পঞ্চায়েত কমিটির নেতা তাজুল ইসলাম, নূরু মিয়া, পৌর তাঁতী লীগের সাধারণ সম্পাদক হানিফ মিয়া, ইকবাল হোসেন প্রমুখ।
এদিকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত নন বলেই দাবি করেন, জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আশিকুর রহমান হৃদয়। তিনি ছাত্রলীগ করেন এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো হওয়ায় তাঁরা অপপ্রচার চালাচ্ছেন বলেও জানান তিনি৷
জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল হোসেন রুবেল বলেন, ছাত্রলীগের কারোর বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার সংশ্নিষ্টতা পাওয়া গেলে তাঁর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারোর অপকর্মের দায় সংগঠন নেবে না।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. এমরানুল ইসলাম বলেন, হৃদয়ের বিরুদ্ধে যদি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকে, অবশ্যই তাকে গ্রেপ্তার করা।