নতুন সরকার গঠনের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন খাতের দুর্নীতি ও অনিয়মের তথ্য উঠে আসছে৷ এবার বিআরটিএ’র কার্যক্রম নিয়ে বিস্ফোরক এক তথ্য দিয়েছেন সরকারি প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা। দেশের অভ্যন্তরীণ তথ্য বাইরে পাচারের অভিযোগ তুলেছেন তিনি।
ফেস দ্যা পিপল পাঠকদের জন্য তার পাঠানো বক্তব্য তুলে ধরা হলো–
“আমি আবরার আহমেদ (ছদ্মনাম), বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কতৃপক্ষের (BRTA) একজন কর্মকর্তা। আমি দীর্ঘদিন ধরে এ ডিপার্টমেন্টে কর্মরত আছি। দীর্ঘদিন ধরেই খুব সূক্ষ্মভাবে এ ডিপার্টমেন্টকে লক্ষ্য করে আসছি এবং এটা বলতে পারি এই ডিপার্টমেন্টের প্রতি দেশের সাধারণ মানুষের একটা নেগেটিভ ধারণা রয়েছে। যে লাইসেন্সের স্মার্ট কার্ডের জন্য দীর্ঘদিন আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে।”
“এবার বলছি এর প্রধান কারণ কী। শোনেন– এই স্মার্ট কার্ডটা ভারতীয় একটা কোম্পানি MSPL(Madras Security printers Limited) প্রিন্ট করে এরপর দেশে পাঠাবে। এই কার্ডটাই বাংলাদেশ সরকার ডলারের বিনিময়ে আমদানি করে। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ গ্রাহকের জন্য ভারতে ডলারের বিনিময়ে কার্ড নিতে হচ্ছে।”
“আমি একটা প্রশ্ন রাখি – এদেশের বেসরকারি ব্যাংকের যেসব ডেভিড-ক্রেডিট কার্ড প্রিন্ট করা হয় সে তুলনায় বিআরটিএ’র পক্ষ থেকে প্রদান করা এই কার্ডের মান খুব নিম্নমানের। বেসরকারি ব্যাংক যেখানে তাদের ব্যাংকের কার্ড সমূহ এদেশে প্রিন্ট করে ১ মাসের মধ্যে গ্রাহককে দিচ্ছে, সেখানে একটা নিম্নমানের ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ড ডলারের বিনিময়ে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে কেন!”
“আরেকটা সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো– একজন গ্রাহক যখন একটা ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য আবেদন করে তখন তাকে ভারতীয় কোম্পানি MSPL কতৃক বেশ কিছু তথ্য অনলাইনে ফর্ম ফিলাপ করতে হয়।সেখানে গ্রাহকের নাম ঠিকানা, পেশা, এমনকি গ্রাহকের মা,বাবা,স্ত্রী,ভাই, বোন কিংবা ফ্রেন্ডের নাম ঠিকানা ও তাদের মোবাইল নাম্বার ও দিতে হয়। সামান্য একটা লাইসেন্সের জন্য নিজের ব্যাক্তিগত তথ্য দিলেই তো হয়ে যায়, সেখানে তার পারিবারিক তথ্য কেন দিতে হবে তাও একটা ভিনদেশী কোম্পানিকে। এই প্রশ্নের জবাব কোথায় পাবো।”
“একটা গল্প বলি – একদিন একজন সামরিক অফিসারের লাইসেন্সের জন্য আমাকে বললেন। তখন আমি নিজের হাতেই ফর্ম ফিলাপ করতে গিয়ে ভাবনায় আসলো যে আমি একজন বিগ্রেডিয়ার জেনারেলেরও ব্যাক্তিগত তথ্য ভারতীয় কোম্পানিকে দিয়ে দিচ্ছি। তখন চিন্তা করলাম ভিনদেশী কোম্পানিকে কেন এ রকম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তির ব্যাক্তিগত তথ্য দিতে হবে?”
“একটা নির্মম সত্য হচ্ছে– প্রতিদিন যারা আবেদন করছে সে হতে পারে একজন সাধারণ নাগরিক কিংবা উচ্চপদস্থ সামরিক অফিসার, সচিব, সিনিয়র সচিব, NSI/DGFI এর প্রতিনিধি কিংবা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তি,তাকে ও লাইসেন্স করতে হলে ভারতীয় কোম্পানিকে সমস্ত ব্যাক্তিগত তথ্য দিতে হবে। প্রতিদিন এভাবে আমরা আমাদের দেশের নাগরিকদের তথ্য অন্য দেশে পাচার করছি।”
“দুই কিংবা তিন বছর আগে আমি আমার MSPL এর প্যানেল পাসওয়ার্ড হারিয়ে ফেলেছি, আমি তখন আমাদের হেড অফিসে যোগাযোগ করলাম, ওরা আমাকে বলল এই পাসওয়ার্ড ভারতীয় এক্সপার্ট রিকভার করবে দুই একদিন সময় লাগবে, ওরা করে দিলে তারপর আপনাকে আমরা দিব। আমি তো অবাক হলাম ভাই! ডাটা সার্ভারের পাসওয়ার্ড ও তাদের কাছে,স্মার্ট কার্ড ও তারা প্রিন্ট করে?কেন??”
“আচ্ছা ভাবুন তো ভাই। এদেশে বুয়েট, চুয়েট, ডুয়েট, কুয়েটসহ, যতগুলো প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে সেখান থেকে প্রতিদিন অনেক আইটি এক্সপার্ট বের হচ্ছে। তাদেরকে তো অল্প পুজি দিয়েই এদেশে সার্ভার ডেভলপ করে এদেশে প্রিন্ট করতে পারে, এটা তো আহামরি কোন কাজ না।যেখানে বেসরকারি ব্যাংক গুলো এদেশে তাদের কার্ড গুলো প্রিন্ট করছে সেখানে এত নিম্নমানের এই ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ড কেন এদেশে প্রিন্ট করা যাবে না?”
“কিসের ভিত্তিতে আমরা আমাদের দেশের নাগরিকদের বায়োমেট্রিক ছাপ সহ ব্যাক্তিগত তথ্য ভারতকে দিব? যদিও এ সিস্টেমটা আগে অন্য একটা দেশে করত, তখন আমাদের দেশে প্রযুক্তি এত উন্নত ছিল না। কিন্তু প্রযুক্তি উন্নত হওয়ার পরও আওয়ামী সরকার এসে অন্য দেশের সাথে চুক্তি বাতিল করে ভারতের সাথে ড্রাইভিং স্মার্ট কার্ডের চুক্তি করে।দেশের নাগরিকদের তথ্য পাচার করে কেন এটা করতে হবে?”
“আমি দেশের মানুষকে ছাত্র-জনতাকে শুধু জানিয়ে রাখতে চাই। দ্রুত যেন এই চুক্তি বাতিল করে দেশের নাগরিকদের লাইসেন্স স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট দেশেই করা হয়। এতে করে আমাদের তথ্য ও সুরক্ষ থাকবে, সময় ও বাঁচবে। একইসাথে বৈদশিক মুদ্রাও অপচয় হবে না।”