বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশন বাতিলের দাবিও জানিয়েছে দলটি। সরকারের পদত্যাগ এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন।
শনিবার (১৫ জুলাই) জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও নির্বাচন কমিশন বাতিল, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন (পিআর) পদ্ধতির প্রবর্তন, বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচনের দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ সমর্থনের ঘোষণা দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।
সমাবেশের প্রধান অতিথি মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- ১৬ জুলাই থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশের সব থানায় তৃণমূল প্রতিনিধি সম্মেলন। সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে সব জেলা এবং মহানগরে সম্মেলন ও ওলামা সমাবেশ।
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান সরকার দেশপ্রেমিক সরকার নয়, তারা ক্ষমতাপ্রেমিক সরকার। দেশের মানুষ স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য আওয়াজ তুলেছে। আর আপনি (ওবায়দুল কাদের) বলছেন, শেখ হাসিনার অধীনেই জাতীয় নির্বাচন হবে। আমি এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং ধিক্কার জানাচ্ছি। সব রাজনৈতিক দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে। এমন নির্বাচনের দরকার তো নেই।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন- আপনারা আমার ওপর আস্থা রাখেন, আমি স্বচ্ছ-সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করব। আপনার (প্রধানমন্ত্রীর) কথার ওপর আস্থা রেখে আমরা প্রার্থী হয়েছিলাম, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তখন আমাদের ধোঁকা দিয়ে বোকা বানিয়ে দিনের ভোট রাতে বাক্সে ভরে ডাকাতির মাধ্যমে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করেছেন।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির বলেন, ইসলামের দৃষ্টিতে একবার যার থেকে মিথ্যা সাক্ষী প্রমাণ হয় তার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হয় না। আপনারা এখন আবার বলছেন আগামী জাতীয় নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে করবেন। আমাদের বারবার ধোঁকা দিয়ে বোকা বানাবেন- তা হবে না। হাদিসের মধ্যে রয়েছে- মুমিন এক গর্তে দ্বিতীয়বার আছাড় খায় না। আমরা দ্বিতীয়বার আপনার ধোঁকায় বোকা হয়ে একই গর্তে পা রাখতে চাই না। এজন্য পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করছি- এ কর্মসূচি দেশ রক্ষা ও ইসলামের জন্য, জনগণকে স্বাধীনভাবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে দেওয়ার জন্য। যদি রক্ত দিতে হয়, জীবন দিতে হয় আমরা দেব। আসুন সবাই একত্রিত হই। মজলুমরা যখন জালিমের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলবে তখন ফেরাউনের মসনদ ভেঙে চুরমার হয়ে বঙ্গোপসাগরে নিক্ষিপ্ত হবে।
বর্তমান সরকারের কাছে ইসলাম ও আলেম-ওলামারা নিরাপদ নয়, দেশও নিরাপদ নয় উল্লেখ করে চরমোনাই পীর বলেন, তাদের ক্ষমতাপ্রেমের কারণে বিদেশিরা স্বাধীন দেশে এসে নাক গলানোর সুযোগ পায়। এটা কলঙ্কিত ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ সরকার জনগণের কল্যাণের পক্ষের সরকার নয়। এ সরকার বিদেশিদের তাঁবেদার, তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের সরকার।
সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, সহকারী মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ ইমতিয়াজ আলম। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ।