জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) মো. মশিউজ্জামান বলেছেন, ভুলত্রুটি নয়, বিতর্কহীন থাকা এবং সহনশীল পরিস্থিতির জন্যই চলতি শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বইয়ের পাঠদান প্রত্যাহার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার( ২৮ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে বিতর্কের মুখে চলতি শিক্ষাবর্ষের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বিষয় ‘অনুসন্ধানী পাঠ’ বই দুটির পাঠদান প্রত্যাহারের ব্যাখ্যা দেন মো. মশিউজ্জামান।
সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি নামের একটি সংগঠন ‘বিজ্ঞানভিত্তিক, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক ও সমতাভিত্তিক শিক্ষা পাঠ্যক্রমবিষয়ক অপপ্রচার বন্ধ হোক’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে।
এর আগে আলোচনা-সমালোচনার মুখে বই দুটির পাঠদানের বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। তবে তদন্তের প্রতিবেদনের আগেই গত ১০ ফেব্রুয়ারি অনেকটা আকস্মিকভাবেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওই দুটি বই প্রত্যাহারের কথা জানিয়েছিল এনসিটিবি। তবে, ঠিক কী কারণে তা প্রত্যাহার করা হয়েছিল তার ব্যাখ্যা সেদিন দেওয়া হয়নি।
এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে চলছে আলোচনা। অভিযোগ উঠেছে, নির্বাচনের বছরে মূলত ‘রাজনৈতিক কারণেই’ সরকার বই দুটি প্রত্যাহার করে নেয়।
আজকের আলোচনায় প্রত্যাহারের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এনসিটিবির সদস্য মো. মশিউজ্জামান বলেন, প্রত্যাহার হওয়া বই দুটিতে ভুলত্রুটি আছে বলে তাঁরা মনে করেন না। তবে বানান ভুল থাকতে পারে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাঁরা সবার কাছে বিতর্কহীন থাকার চেষ্টা করেন।
রাষ্ট্রও চায় সবার কাছে একটি সহনশীল পর্যায় থাকুক। সে রকম অবস্থায় তাঁরা বিবেচনা করেছেন যে এই দুটি পাঠ্যবই যদি প্রত্যাহারও হয়, তাতে শিক্ষার্থীরা ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে না। তবে এটি থাকলে হয়তো আরেকটু সহায়তা করত।
ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির দুটি বই প্রত্যাহার এবং অপপ্রচার প্রসঙ্গে মশিউজ্জামান আরও বলেন, গত ৩ জানুয়ারির পর তাঁরা একটি জটিল পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যান। তাঁরা লক্ষ্য করেছেন, নির্বাচনের আগের বছরে এগুলো (অপপ্রচার) বেশি করা হয়। ২০১৭ সালেও অপপ্রচার হয়েছে। এবারের অপপ্রচার মাত্রাহীন এবং মিথ্যা প্রচারণায় ভরপুর ছিল। তাঁদের পক্ষ (সরকার ও এনসিটিবি) থেকে এগুলোর ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা ছিল।
এ সময় আক্ষেপ করে আজকের আলোচনার আয়োজকদের উদ্দেশে মশিউজ্জামান বলেন, তখন একটু অসহায় বোধ করেছি, তখন আপনারা কেউ আমাদের পাশে ছিলেন না।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী জানান,অসাম্প্রদায়িক দেশটিকে পুরোপুরি উল্টো দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আর সরকার আপসকামিতার পরিচয় দিচ্ছে বলে মনে করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্ট্রি মফিদুল হক।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেমের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীরসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বক্তব্য দেন।