আওয়ামী লীগ স্বৈরাচারের যে শৃংখল তৈরি করেছে তা ভেঙেই মানুষ এখন রাজপথে উপচে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, তাদের পতনের ধ্বনি তারা শুনতে পাচ্ছে না আর শুনতে পেলেও অগ্রাহ্য করছে। তারা বিরোধীদলকে যে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে, চিৎকার করছে এটা তাদের পতনের ভয় ছাড়া আর কিছুই না।
শুক্রবার (২১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মানবসেবা সংঘ আয়োজিত মুক্তির পংক্তিমালা গ্রন্থের মোড়ক উম্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
মানবসেবা সংঘের সভাপতি সঞ্জয় দে রিপনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশরাফ উদ্দিন আহমেদ উজ্জল প্রমুখ।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, শনিবার খুলনাতে বিএনপির জনসমাবেশ। ওবায়দুল কাদের, হাছান মাহমুদ নানান ধরনের কথা বলছেন। হাছান মাহমুদ বলছেন জব্বারের বলিখেলায় যত লোক হয় বিএনপি’র সমাবেশে তত লোক হয় না। আবার ওবায়দুল কাদের বলছেন, লাখ খানেকের মতো মানুষ হবে এটা প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি। তবে ওরা (বিএনপি) যদি ঢাকাতে ১০ লাখ লোক জড়ো করে আমরা ৩০ লাখ লোক জড়ো করবে।
রিজভী বলেন, আমাদেরকে নিয়ে এত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন। তাহলে, খুলনাতে আমাদের জনসমাবেশ পথে পথে বাধা দিচ্ছেন কেন? শ্রমিক ইউনিয়ন, পরিবহন মালিক সমিতিকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকিয়েছেন কেন? রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের অংশ হচ্ছে সমাবেশ করা, মিছিল করা, সমালোচনা করা। কিন্তু ওদের জেনেটিক্যালি হচ্ছে এক ধরনের জমিদারি শাসন নাৎসিবাদের শাসন ধারণ করে বলেই প্রতিপক্ষের কোনো অধিকার তারা কখনো স্বীকার করেনি। আর স্বীকার করেনি বলে যখনই তারা ক্ষমতায় এসেছে তখনই প্রতিপক্ষকে হত্যা, গুম, মিছিল-সমাবেশে বাধা দিয়েছে।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, এটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য। আওয়ামী লীগের শাসনের ঐতিহ্য। আপনারা যদি এতই বাহাদুর তাহলে সমাবেশ বানচাল করার জন্য নিজের লোকদেরকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকাচ্ছেন কেন? বাংলাদেশের মানুষ কি এতই বোকা? এতই বেকুব যে শ্রমিক ইউনিয়ন, পরিবহন মালিক সমিতি কারা কার নির্দেশে চলে এটা জানে না? এটা সবাই জানে।
আসল ঘটনা হলো শেখ হাসিনা আওয়ামী সরকার ভেতর থেকে ভয় পেয়েছে এমন মন্তব্য করে রিজভী বলেন, তাদের যদি জনসমর্থন থাকতো তাহলে বিরোধী দলের সমাবেশে বাধা দেবে কেন? তাদের জনসমর্থন একেবারে তলানিতে চলে গেছে। সরকার জানে তাদের কোন গণভিত্তি নেই। তাই রাষ্ট্রশক্তিকে কাজে লাগিয়ে যেভাবেই হোক বিরোধীদলের সমাবেশ পণ্ড করতে চায়। এই কারণে যত প্রকার পরিবহন আছে সব বন্ধ করে দিয়েছে।
তিনি বলেন, অলিখিত হরতাল সেখানে জারি করেছে। তারপরেও ট্রেন বোঝাই করে মানুষ খুলনার দিকে রওনা দিয়েছে। ট্রেনের ছাদে ভিতরে মানুষ একেবারে থৈ থৈ করছে। অর্থাৎ ওরা (আওয়ামী লীগ) যে বেড়াজাল তৈরি করেছে সেই বেড়াজাল ছিন্ন করে মানুষ উপচে পড়ছে খুলনাতে এবং সারাদেশেও তাই হবে।
রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, আমাদের প্রিয় নেত্রী যিনি দেশকে ভালবাসেন। দেশের মানুষকে ভালবাসেন। তাকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য সরকার কত সুযোগ দিয়েছে। তার (হাসিনা) আন্দোলনের ফসল ১-১১ তত্ত্বাবধায়ক সরকার তারাও চেষ্টা করেছে কিন্তু দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যাননি। শেখ হাসিনা কিন্তু ঠিকই গিয়েছিলেন। তারপর তিনি ওয়ান-ইলেভেনের যারা নায়ক তাদেরকে বললেন, খালেদা জিয়াকে বের করতে পারো না আমাকে এখানে রেখেছো আমিও দেশে ফিরে যাব। তারপর তিনি ফিরে আসলেন। কারণ ওই সরকারও তো তাদের সরকার ছিল।যে নেত্রীকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দিয়েও তার দেশত্ববোধ, জনগণের প্রতি তার যে মায়া ভালবাসা কেড়ে নিতে পারেনি। তাকে (বেগম খালেদা জিয়া) বন্দি করতে পারেন কিন্তু পরাজিত করতে পারবেন না বেগম খালেদা জিয়াই বিজয়ী।
তিনি আরও জানান, বিশ্বে যারা স্বাধীনতার নায়ক তারাও বন্দি ছিল। তারা কি পরাজিত হয়েছে? ইতিহাসের এক একটা অধ্যায়ে তারা জ্যোতিষ্কের মত জ্বলছে। বেগম জিয়াকে এই দানবীয় সরকার বন্দি করতে পারে কিন্তু তিনি মানুষের হৃদয়ের মধ্যে আছে। এই বিজয়ী বীরকে আপনি (হাসিনা) পরাজিত করতে পারবেন না।