বিশ্ববাজারে খাবারের দাম কমলেও উল্টো পরিস্থিতির মাঝে দিন পার করছে বাংলাদেশ। সারাবিশ্বে যখন খাবারের দাম নিচের দিকে নামছে, বাংলাদেশে তখন প্রতিনিয়ত বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। বাড়ছে সাধারণ মানুষের দূর্ভোগ।
জাতিসংঘের খাদ্য সংস্থার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, গত মে মাসে বিগত দুই বছরের মধ্যে খাবারের দাম সর্বনিম্ম পর্যায়ে নেমে এসেছে। চিনি ও মাংসের দাম বেড়ে গেলেও উদ্ভিজ্জ তেল, খাদ্যশস্য ও দুগ্ধজাত পণ্যের দাম কমেছে অনেকখানি।
কিন্তু এসবের কোন প্রভাবই নেই বাংলাদেশে। বরং জুন মাসে বাজেটের প্রভাবে এখন থেকেই দাম বাড়াতে শুরু করেছে পাইকারি এবং খুচরা বিক্রেতারা। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে এমন চিত্র।
ব্রয়লার মুরগির দাম বর্তমানে ২২০ টাকা। কয়েকমাস আগেও যার দাম ছিলো ১৩০ টাকা। দাম বেড়েছে সব ধরণের সবজির। মাছ মাংসের দোকানেও লেগেছে বাড়তি দামের হাওয়া।
ঠিক একই সময়ে জাতিংসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা এফএও জানিয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক তথ্য। মে মাসের খাদ্যশস্যের মূল্যসূচক আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৫ শতাংশ কমেছে।
মে মাসে খাদ্যমূল্যের গড় সূচক ছিল ১২৪ দশমিক ৩ পয়েন্ট। বৈশ্বিকভাবে সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয়, এমন পণ্যদ্রব্যের দাম ওঠানামার ভিত্তিতে এই সূচক তৈরি করেছে এফএও।
সংস্থাটির দেয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর ২০২২ সালের মার্চে সর্বকালের সর্বোচ্চ পয়েন্টে পোঁছে গিয়েছিলো এই সূচক। বর্তমানে সেই মান প্রায় ২২ শতাংশ কমে এসেছে।
পর্যাপ্ত সরবরাহের সম্ভাবনা ও কৃষ্ণসাগর শস্য চুক্তির মেয়াদ বাড়ানোয় ইউক্রেন থেকে রপ্তানির সুযোগ তৈরি হওয়ায় দামের উপর এমন প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
সূচক মান বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এপ্রিল-মে মাসে বিশ্বজুড়ে ভোজ্যতেলের দাম কমেছে ৯ শতাংশ। যদিও এর কোনকিছুই স্বস্তি দিচ্ছেন দেশের মানুষকে।
গেল বছরের অগাস্টে সব ধরণের বিশ্ববাজারের দামের সাথে মিল রাখতে জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতে বাধ্য হয় বাংলাদেশ সরকার। সেবার সব ধরনের জ্বালানি তেলের দাম ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দেয়া হয়েছিলো।
এর প্রভাবে বেড়ে গিয়েছিলো পরিবহন খরচ। বাধ্য হয়েই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াতে শুরু করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। এরপর থেকে আর সেই খরচকে আয়ত্বের মাঝে আনা সম্ভব হয়নি।
নভেম্বর ২০২২ থেকে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমলেও একই সময়ে স্থানীয় বাজারে সয়াবিন তেলের দাম কমেনি। জুলাই থেকে ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত গরুর মাংসের আন্তর্জাতিক মূল্য হ্রাস পেয়েছে, যেখানে বাংলাদেশে গরুর মাংসের দাম একই সময়ে বেড়েছে।
তবে এফএও এর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এখনো বিশ্বজুড়ে চালের দামের বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বৈরি আবহাওয়ায় চীন, ভারতসহ শীর্ষ উৎপাদক দেশগুলোতে চলতি মৌসুমে খাদ্যপণ্যটির উৎপাদন কমে আসায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।