নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তেই নিখোঁজ রয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা আবু আসিফ আহমেদ৷
প্রার্থীর নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা জানিয়েছেন, আসিফ আহমেদকে খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাশেদা সুলতানা বলেন, তদন্তের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিসি, এসপি ও জেলা নির্বাচন অফিসারকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিশন তো নিজে গিয়ে ধরে আনতে পারবে না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চাইলে উদ্ধার করতে পারবে না, তা বিশ্বাস করি না।
পুলিশকে উদ্দেশ্য করে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা আরও বলেন, ‘তাকে (আসিফ আহমেদ) উদ্ধার করেন। আন্তরিকতার সঙ্গে চেষ্টা করেন। ইলেকশনের আগে যেভাবে হোক ওনাকে বাইরে নিয়ে আসেন।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন একটি গণমাধ্যমকে জানান, ‘নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা পেয়েছি। আসিফ আহমদের সন্ধান চলছে।’
এ সময় জানতে চাওয়া হলে–আবু আসিফ আত্মগোপনে, নাকি নিখোঁজ- জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, তিনি জনসম্মুখে এলে তা জানা যাবে।
গত ডিসেম্বরে বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত মেনে অন্য সংসদ সদস্যদের সঙ্গে পদত্যাগ করেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সাংসদ উকিল আবদুস সাত্তার ভূঁঞা। পদত্যাগের ২০ দিন পর উপনির্বাচনে প্রার্থী হলে তিনি বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হন। এ উপনির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বি কোন প্রার্থী দেয়নি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ৷
৮ জানুয়ারি এই উপনির্বাচনের মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর আটজনের প্রার্থিতা বৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এদের মধ্যে আওয়ামী লীগের তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী একসাথে নিজেদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। পরে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান জাতীয় পার্টির দুবারের সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধাও।
শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে আছেন আবদুস সাত্তার ভূঁইয়া (কলার ছড়া), আশুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবু আসিফ আহমেদ (মোটরগাড়ি), জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব আবদুল হামিদ ভাসানি (লাঙল) ও জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল)।
উকিল সাত্তারের বিরুদ্ধে প্রার্থী হিসেবে বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া আসিফ আহমেদ হয়ে ওঠেন প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বি।
নির্বাচনী কার্যক্রমের শুরু থেকেই তিনি অভিযোগ করছিলেন, উকিল সাত্তারকে জেতাতে অন্য প্রার্থীদের মতো তাঁকেও ভোট থেকে সরাতে চাপ দেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার রাত থেকে নিখোঁজ রয়েছেন আসিফ আহমেদ এবং তাঁর নির্বাচনি সমন্বয়ক শাফায়েত হোসেন সুমনের খোঁজ নেই। সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ফোনালাপ ছড়ায়। বলা হচ্ছে, এটি আসিফ আহমেদের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা এবং গৃহকর্মীর কথপোকথন।
এতে শোনা গেছে, আসিফ আহমেদের জন্য জামাকাপড় গুছিয়ে দিতে গৃহকর্মীকে নির্দেশ দিচ্ছেন মেহেরুন্নেসা। আসিফ আহমেদ বাসা ছাড়ার ১০ মিনিট সিসি ক্যামেরা চালু করতে বলছেন। যদিও গত রোববার মেহেরুন্নেসা অভিযোগ করেছিলেন, তাঁর স্বামী নিখোঁজ রয়েছেন।
সোমবার দুপুরে আশুগঞ্জের ফেরিঘাট এলাকায় আসিফ আহমেদের বাসায় গিয়ে প্রধান ফটক তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। বিকেলে আবার গেলে গৃহকর্মী কবিতা বেগম জানান, রোববার রাতে ঢাকায় চলে গেছেন মেহেরুন্নেসা।
এ বিষয়ে স্থানীয় বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, উকিল সাত্তারের সমর্থনে ভোট থেকে সরে যেতে প্রচণ্ড চাপ ছিল আসিফ আহমেদের ওপর। তা সামলাতে না পেরে তিনি এলাকাছাড়া হয়েছেন। আসিফ আহমেদ ধনাঢ্য ব্যক্তি। তাঁর নানা রকমের ব্যবসা রয়েছে। তাঁর ওপর ব্যবসায়িক চাপও আসে। তিনি ঢাকায় আত্মগোপনে থাকতে পারেন।
আসিফের স্ত্রী মেহেরুন্নেসার অভিযোগ ছিল, তাঁদের বাড়িতে নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ।
তবে পুলিশ সুপার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, পুলিশ আসিফ আহমেদের বাড়িতে যায়নি। নজরদারিও করছে না। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।