ভারতের উড়িষ্যায় কলকাতার হাওড়া-চেন্নাইগামী ট্রেন করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২০৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও প্রায় ৯ শতাধিক। পূর্ব ভারতীয় রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা এটিকে এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে মারাত্মক রেল দুর্ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে দুর্ঘটনার তথ্যের জন্য হটলাইন নম্বর চালু করেছে কলকাতায় বাংলাদেশের উপ হাইকমিশন। চিকিৎসার জন্য অনেক বাংলাদেশি যাত্রী করমণ্ডল এক্সপ্রেসে কলকাতা থেকে চেন্নাই যাতায়াত করেন। ফলে এ ভয়াবহ দুর্ঘটনায় বাংলাদেশি যাত্রী থাকার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতীয় রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার ওড়িশায় দুটি যাত্রীবাহী ট্রেনের সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০৭ জন নিহত এবং ৯০০ জন আহত হয়েছেন।
ওড়িশার দমকল বিভাগের মহাপরিচালক সুধাংশু সারঙ্গি রয়টার্সকে বলেছেন, এ পর্যন্ত ২০৭টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
উড়িষ্যা রাজ্যের মুখ্য সচিব প্রদীপ জেনা এক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
জানা যায়, সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বালেশ্বর স্টেশন থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে বাহানাগা স্টেশনের কাছে ট্রেনটির সঙ্গে একটি মালগাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ট্রেনটির প্রায় ১৮টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। ট্রেনের গতি বেশি থাকায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের ইঞ্জিনটি মালগাড়ির উপরে উঠে যায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি টুইট বার্তায় বলেন, দুর্ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান চলছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনায় রেলের উচ্চ পর্যায়ে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এ ঘটনাকে ‘গভীর বেদনাদায়ক’ বলে উল্লেখ করেছেন।
এ দুর্ঘটনায় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, করমণ্ডল দুর্ঘটনায় বাংলার অনেকে জখম হয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফ থেকে উদ্ধার কাজ চালাতে সেখানে একটি দল পাঠানো হচ্ছে।
সংবাদমাধ্যম এএনআইকে বেঁচে যাওয়া একজন বলেছেন, দুর্ঘটনার পর ১০ থেকে ১৫ জন আমার ওপর পড়ে। সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। আমি তখন ধ্বংসস্তূপের নীচে ছিলাম। আমার হাত ও ঘাড়ের পেছনে চোট লেগেছে। ট্রেনের বগি থেকে নেমে দেখি কেউ হাত হারিয়েছে, কেউ পা হারিয়েছে আবার কারো মুখ বিকৃত হয়ে গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, করমণ্ডল এক্সপ্রেস ধাক্কা মারে একটি মালগাড়িতে। এর ফলে করমণ্ডল এক্সপ্রেসের প্রথম তিনটি কামরা বাদে সব কামরাই লাইন থেকে ছিটকে পড়ে।
এ দুর্ঘটনার পর ৫টি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করেছে দেশটির দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যাত্রা বাতিল হওয়া ট্রেনগুলো হলো- পুরী এক্সপ্রেস, যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, সাঁতরাগাছি পুরী স্পেশাল, শালিমার সম্বলপুর, চেন্নাই মেইল।