মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক দাবি জানিয়েছেন, স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরুদ্ধে যারা কথা বলে তাদের শাস্তি বিধান রেখে সংসদে আইন পাস করার। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তি হওয়া উচিত। দেশকে একটা সেফ গার্ড দিতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতকারী ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষে মিথ্যাচারকারীদের শাস্তি বিধানে আইন পাস করা প্রয়োজন।
রবিবার (৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর আনা কার্যপ্রণালি বিধির ১৪৭ বিধির আওতায় ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ আইন প্রণয়নের দাবি জানান।
মন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে ঘাতকরা শুধু একটা মানুষকে হত্যা করেনি, তারা একটি স্বাধীন সংসদ নয়, একটা জাতিকে হত্যা করেছিল। বাংলার মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পদদলিত করেছিল। এসব ঘটনা চোখ মেলে দেখা দরকার, তা না হলে বারবার আমাদের হোঁচট খেতে হবে। ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড, চার নেতার হত্যাকাণ্ড, সংবিধানে কাটাছেঁড়া– এসব কিছুই ছিল এ দেশ থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে মুছে ফেলা।
তিনি বলেন, সেই কারণে ২৩ বছরের শোষণ-বঞ্চনার পর মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে যে গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতা– এ মূল চার নীতির ওপর ভিত্তি করে দেশ পরিচালিত হচ্ছিল, তারা এ ধারণাকে মুছে ফেলার চেষ্টা করেছিল। কয়েকদিন আগে বিএনপির এক নেতা বলেছেন, এর চেয়ে পাকিস্তান ভালো ছিল। তারা বলে আমাদের এই মহান মুক্তিযুদ্ধের নাকি কোনো প্রস্তুতি ছিল না। তাহলে সিক্রেট ডকুমেন্ট, প্রধানমন্ত্রী যা সংকলিত করেছেন সেসব যাবে কোথায়?
পাকিস্তান আমলে বঙ্গবন্ধুকে এন্টিপাকিস্তানি বলা হয়েছে, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, বিচ্ছিন্নতাবাদী বলা হয়েছে, বারবার জেলে নেওয়া হয়েছে এসব ডকুমেন্ট তো আছে। তারা এখনো পাক প্রেমী, এদের মন থেকে সেই পাকিস্তান প্রেম যায়নি। তারা মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে বিতর্কিত করে তারা আবারো পাকিস্তান ঘরনার ধর্মীয় রাজনীতি চালু করে এ দেশকে অকার্যকর করতে চায়। মুক্তিযুদ্ধের সময় ল্যুজ কনফেডারেশন করে পাকিস্তান টিকিয়ে রাখতে চেয়েছিল। খুনি মোস্তাক, খুনি জিয়া বলেছিল ওয়ার কাউন্সিল করে মুক্তিযুদ্ধ করার জন্য এবং রাজনৈতিক সরকারের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ না করার জন্য।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, তারা বাংলাদেশকে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার চক্রান্ত করছে। শুধু তারাই চক্রান্ত করছে না, যারা এ সংসদকে বিশ্বাস করে না, দেশি-বিদেশি চক্রান্তকারীদের মুখপাত্র হিসেবে অনেকেই এ ষড়যন্ত্র করছে।
আমি মনে করি, সংসদ যেহেতু সমস্ত কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু, তাই এখানে মিথ্যাচার, ইতিহাসের বিকৃতি, তারা যখনই সময় পায় তখনই সে প্রচেষ্টা চালায়। প্রধানমন্ত্রী যেহেতু জেলহত্যা, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন, তিনিই দেশবিরোধী, স্বাধীনতাবিরোধীদের শাস্তির জন্য এ আইনটি করতে পারেন বলে জানান মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।