শুক্রবার, জানুয়ারি ১৭, ২০২৫
Homeজাতীয়মুগ্ধকে পুলিশই গুলি করেছিল : স্নিগ্ধ

মুগ্ধকে পুলিশই গুলি করেছিল : স্নিগ্ধ

গত ১৮ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলার সময় রাজধানীর উত্তরায় এলাকায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। এ নিয়ে মুগ্ধর জমজ ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, পুলিশের গুলিতে মুগ্ধর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসে অভিযোগ দায়ের শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।

স্নিগ্ধ বলেন,  মুগ্ধ গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে একটা বিতর্ক ছিল। যে গুলিটা পুলিশের মধ্যে থেকে করা হয়েছে নাকি বাইরের কারো থেকে করানো হয়েছে। অথবা স্নাইপার থেকে করা হয়েছে কিনা। তবে আমাদেরকে কাছে যে প্রমাণাদি আছে, তার মাধ্যমে আমরা বলতে পারি পুলিশের পক্ষ থেকে এ গুলি চালানো হয়েছে। আমরা যে ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছি সেখানে স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে, পুলিশের গুলিতেই মুগ্ধের জীবন গেছে।

মুগ্ধের বড় ভাই মীর মাহমুদুর রহমান দীপ্ত বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসেছি মুগ্ধের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করার জন্য। সে ১৮ জুলাই গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন। সন্তান হারিয়ে বিগত ছয় মাসে আমাদের বাবা-মা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে গেছে। আমাদের সর্বাত্মক চেষ্টা ছিল মা-বাবাকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অনেক কিছুর কারণে ও প্রেসারাইজ সিচুয়েশন যেমন অন্যান্য ভিন্ন রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন মানুষদের কারণে তারা এখন পর্যন্ত সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনে আসতে পারছেন না। এটা আমাদের একটি চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, এ ছয় মাসে হত্যাকাণ্ডের বিষয় যতটুকু প্রমাণ বের করা সম্ভব তা আমরা নিজ উদ্যোগেই বের করেছি। যেহেতু প্রথম দিকে প্রশাসন পুরোপুরি অকার্যকর অবস্থা ছিল, তাই আমরা নিজ উদ্যোগে এই কাজ করেছি। আমাদের সব ধরনের ভিডিও ফুটেজ, সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করতে হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মুগ্ধের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে যে ভিডিও তা পুরোটা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া হয়েছে। তার হত্যাকাণ্ডের যেহেতু ভিডিও ফুটেজ আছে, তার  বিচারের বিষয়ে সেটা আমরা সরকারের কাছে আশা করতেই পারি। কিন্তু এই ফুটেজ কালেক্ট করা আমাদের দায়িত্ব ছিল না, এটা প্রশাসনের দায়িত্ব ছিল। যেহেতু এটা নিজ উদ্যোগে করেছি, তাই আমাদের এখন আশা থাকবে ভিডিওটিকে ফরেনসিকের মাধ্যমে তাদের চেহারা কে পরিষ্কার করে, একজন একজন করে আসামিদেরকে নিয়ে এসে এক সুষ্ঠু বিচার কার্য করবে। আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য শুধু মাত্র ন্যায়বিচার পাওয়া।

দীপ্ত বলেন, আমরা ট্রাইবুনালে অভিযোগ করেছি মুগ্ধের পুরো ঘটনাটার উপর। চিত্র প্রসিকিউটরও আমাদের এ বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। আমরা প্রাথমিক অভিযোগে কোনো নাম দেইনি। তারাই এটিকে নিয়ে তদন্ত করবে এবং তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণাদিসহ ক্রমান্বয়ে যে নামগুলো আসবে। এই প্রাণঘাতী অস্ত্র কে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে এই সবসহ একে একে নামগুলো আসবে। যে কারণে আমাদের অভিযোগে কোনো নাম দেইনি আমরা।  আমরা আশা রাখছি এই সরকার এবং ট্রাইবুনাল আমাদের আশা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সুপেরিয়র হিসাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর এর দায়ভার যায়, যা আমরা সবাই জানি। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় তথ্য প্রমাণের কারণে সেই পর্যন্ত যাওয়া সম্ভব হয় না। বিচারকার্যে প্রমাণাদি হচ্ছে সবচেয়ে মুখ্য বিষয়। তাই কোনো এভিডেন্স ছাড়া যদি আমরা সেই প্রক্রিয়ায় যাই, তাহলে বিচারকার্য বাধাগ্রস্ত হতে পারে। আমরা চাই না এ বিচারকার্য বাধাগ্রস্ত হোক। আমরা যাতে ন্যায় বিচার পাই সেজন্যই আমরা এভাবে চেয়েছি।

১৮ জুলাই মুগ্ধের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে বড় ভাই দীপ্ত বলেন, মুগ্ধ যেখানে মারা যায় তার ১০ কদম দূরেই হাসপাতাল ছিল। হাসপাতালে নেওয়ার পর ডাক্তার তাকে স্পট ডেড ঘোষণা করেন। সেখানে আমাদের পুলিশের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। তখন হাসপাতালে ডাক্তাররা আমাদেরকে বারবার বলছিল লাশ দিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ পুলিশ আসার পরবর্তীতে আমরা লাশ নাও পেতে পারি। পরে সেখান থেকে ডের্থ সার্টিফিকেট নিয়ে আমরা দ্রুত বাসায় লাশ নিয়ে যাই।

spot_img

সর্বশেষ

আরও সংবাদ