রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে সংযোগকারী একমাত্র পথ কের্চ সেতুতে বিস্ফোরণের পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের পর যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। সড়ক সেতুতে মালবাহী একটি ফ্রেইট ট্রাকে বিস্ফোরণের পর রেল সেতুতে থাকা একটি ট্রেনের জ্বালানিভর্তি সাতটি ওয়াগনেও আগুন লাগে বলে জানিয়েছে রাশিয়া। এতে সড়ক সেতুর দুটি সেকশন ধসে পড়ে বলেও জানায় রুশ কর্তৃপক্ষ।
এতে ট্রেন সহ সড়ক সেতুর এক পাশ দিয়েও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে সেতুর নিচ দিয়ে জাহাজ চলাচল অব্যাহত রয়েছে। সেখানে ফেরি সার্ভিস শুরু করার সম্ভাব্যতা নিয়েও আলোচনা করছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় সময় শনিবার সকাল ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত বার্তা সংস্থা আরআইএ।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এই ঘটনায় ইউক্রেনের কর্মকর্তারা উল্লাস প্রকাশ করলেও এর জন্য কোনো দায় স্বীকার করেনি। তবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে দাবি করেছেন, ইউক্রেন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া হিমার্স ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানোর ফলেই এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
এদিকে বিবিসিতে দেয়া সাক্ষাতে একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ বলেন, আগুন লাগার ঘটনা মিসাইল হামলার ফলে ঘটেনি। সেতুর আশেপাশে ক্ষয়ক্ষতির লক্ষণ না থাকায় ধরে নেয়া যায় সেখানে আকাশ থেকে ছোঁড়া অস্ত্র ব্যবহার করা হয়নি। তবে সেতুর নিচ থেকে সুপরিকল্পিত হামলা বা গাড়িবোমা হামলা হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তিনি।
ক্রিমিয়ান রেলওয়ে ফেডারেল স্টেট ইউনিটারি এন্টারপ্রাইজের গণমাধ্যম বিভাগ বলেছে, ‘আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য জরুরিভিত্তিতে কাজ শুরু করা হয়েছে। আগুন লাগার কারণ বের করা হচ্ছে’।
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখল করে রাশিয়া। এরপর ২০১৮ সালে এ সেতুটি চালু করা হয়। বর্তমানে এই সেতুটি ইউক্রেন যুদ্ধে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহে ব্যবহার করে রাশিয়ান সেনাবাহিনী।
এ ঘটনার পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মিখাইলো পোদোলিয়াক এক টুইটবার্তায় বলেন, ‘ক্রিমিয়া, এই সেতু, সবকিছুর শুরু। অবৈধ সবকিছু ধ্বংস করে দিতে হবে, চুরি যাওয়া সবকিছু ইউক্রেনকে ফিরিয়ে দিতে হবে, রাশিয়ার দখলে থাকা সবকিছু অপসারণ করতে হবে। ’
১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ এই ব্রিজটি রাশিয়ার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানিয়েছে বিবিসি। রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়া উপত্যকার ক্রাসনোদার এলাকার মধ্যে একমাত্র সংযোগ স্থাপনকারী এই ব্রিজ। ইউরোপের অন্যতম দীর্ঘ এই সেতু দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ৪০ হাজার গাড়ি পারাপার হয়। এছাড়া বছরে ১ কোটি ৪০ লাখ যাত্রী এবং ১ কোটি ৩০ লাখ পণ্য এই ব্রিজটি দিয়ে পারাপার হয়।
রাশিয়া ও ক্রিমিয়ার মধ্যে স্থলসংযোগের একমাত্র মাধ্যম এই কের্চ প্রণালী সেতু। ক্রিমিয়া উপদ্বীপকে রুশ আধিপত্যের একটি প্রতীক হিসেবে ধরা হয়। ইউক্রেনের দক্ষিণে রাশিয়ার সামরিক অভিযান টিকিয়ে রাখার পথএ এই সেতু। এ অবস্থায় ক্রিমিয়ান সেতু অকেজো হয়ে গেলে দ্বীপটিতে পণ্য বা সামরিক সরঞ্জাম পরিবহন আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
ইউক্রেনে আগ্রাসনের শুরুর দিকে ক্রিমিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় এলাকাগুলো দখল করে আজভ সাগর বরাবর একটি স্থল করিডোর তৈরি করেছিল রাশিয়া। সেসব পুনরুদ্ধার করতে পাল্টা আক্রমণ চালাচ্ছে ইউক্রেন। গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকেই ইউক্রেনের পক্ষ থেকে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এই সেতু উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে।