‘রিজার্ভের টাকা কেউ চিবিয়ে খায়নি’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা প্রধানমন্ত্রী চিবিয়ে খাননি, গিলে ফেলেছেন। পায়রা বন্দরের জন্য রিজার্ভের টাকা কেনো? রিজার্ভের টাকা ব্যয় করতে হবে খাদ্যপণ্য আমদানিসহ অতি জরুরি প্রয়োজনে তা ব্যয় করার জন্য।
তিনি বলেন, নাব্য সংকটের কারণে পায়রা বন্দর ব্যবহার সম্ভব নয়। বন্দরের নাব্য ফিরিয়ে আনতে সরকার সুপার ড্রেজার কিনছে। এসব করে চুরির ব্যবস্থা করছে। আজকে সরকারের দুর্নীতির কারণেই দেশের অর্থনীতি সঙ্কটে পড়েছে। ’
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) জাতীয়তাবাদী যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর যুব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের খেলা হবে মন্তব্যের বিপরীতে তিনি বলেন, কীসের খেলা হবে? আপনারা গত ১৪ বছর দেশের ১৮ কোটি মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলছেন; খেলা হতে হবে তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডে। অন্যথায় কোনো খেলা খেলতে দেওয়া হবে না আপনাদের। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিলে তারপরে নির্বাচনি খেলা হবে দেশে। অন্যথায় এদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে খেলতে দেবে না। ’
বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এই নেতা বলেন, ‘দেশের সংবিধান, সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতি, রাজনীতি, শিক্ষাসহ সবকিছু ধ্বংস করেছে গণধিকৃত সরকার।ভদুর্নীতির কারণে অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষমতায় আসার আগে বলেছিল ঘরে ঘরে চাকরি দেবে। আজকে চাকরি নেই। কেবল সরকারের লোকজন ও যারা ঘুষ দিতে পারছে তাদের চাকরি হচ্ছে। আজকে যুব সমাজ চাকরি পাচ্ছে না, ব্যবসা করতে পারছে না। তারা আজকে হকারি করে। ’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনটা সমাবেশ করে ক্ষমতায় চলে গেছি তেমনটা আমরা মনে করছি না। আমরা মনে করছি তিনটি সমাবেশ করার পর আপনাদের কম্পন শুরু হয়ে গেছে। কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। যে কারণে সমাবেশগুলো বন্ধ করার জন্য আপনারা পরিবহন ধর্মঘট করাচ্ছেন। লজ্জা করে না আপনাদের, কী নির্লজ্জ আপনারা, কাপুরুষ আপনারা। বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বন্ধ করার জন্য আপনারা আপনাদের পেটোয়া ইউনিয়নকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকাচ্ছেন। ’
চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও খুলনায় সমাবেশের আগে পরিবহণ ধর্মঘট ডাকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘সমাবেশে অধিক সংখ্যক মানুষ যাতে অংশ নিতে না পারে সে জন্য আগে থেকেই পরিবহণ ধর্মঘট ডেকেছে। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। সমাবেশে লোক দেখে ভয় পেয়ে পরিবহণ ধর্মঘট ডাকে সরকার। গুলি করে সরকার দমন করতে চায়। দেশের মানুষকে দমানো যাবে না। ’
সমাবেশের আগে পরিবহণ ধর্মঘট ডাকার সমালোচনা করে বাস মালিকদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘মানুষের দুর্ভোগ না বাড়াতে পরিবহণ ধর্মঘট থেকে সরে আসুন। আমরা বাস মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলতে চাই, যারা জনগণের অধিকার কেড়ে নিয়ে লুটপাট করছে তাদের সহযোগিতা করে বাস বন্ধ করবেন না। লোডশেডিং, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত। জনগণের বিরুদ্ধে যাবেন না। বরং জনগণের পক্ষে থাকুন। পরিবহণ ধর্মঘট ডাকলে সাধারণ মানুষের কষ্ট হয়। ’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। তাই আপনাদের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। তারপর দেশে নির্বাচন হবে। অন্যথায় দেশের মানুষ নির্বাচনে যাবে না। ’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান ১০ ডিসেম্বরের পর শেখ হাসিনার সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সকলকে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘২০২২ সাল হবে বর্তমান সরকারের পতনের সাল। ’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘ইলেক্ট্রোনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) কেনার টাকা হয়, কিন্তু বিদ্যুৎ কেনার টাকা সরকারের কাছে নাই। শেয়ারবাজার লুট, রির্জাভ লুট সব কিছুর হিসাব সরকারকে দিতে হবে। ক্ষমতাসীনরা আঘাত করলে লাঠি বাঁশ হাতে নিতে হবে। হামলা প্রতিরোধ করতে হবে। আসেন খেলা হবে, তবে ফাউল করবেন না, ফাউল করলে হাত-পা থাকবে না। ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। খেলা দেখার অপেক্ষায় আছে বিএনপি। ’
দুপুর আড়াইটায় কোরআন তিলাওয়াত, জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে যুবদলের যুব সমাবেশ শুরু হয়। দুপুরে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল ১০টা থেকে রাজধানী ঢাকাসহ আশেপাশের জেলাগুলো থেকে যুবদলের নেতাকর্মীরা নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের আশেপাশে জড়ো হতে থাকেন। এরপর খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন যুবদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবি করে ও সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দেন তারা।