পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেছেন, শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবই পড়াই যথেষ্ট নয়, এর বাইরে শিক্ষার্থীদের মননশীলতা, ভালো মানসিকতা, মেধার বিকাশ, জ্ঞানার্জন ও তথ্যানুসন্ধানের জন্যে বিতর্ক প্রতিযোগিতা সহায়ক ভূমিকা রাখে। এজন্য শিক্ষার্থীদের বিতর্কের চর্চা করতে হবে।
রবিবার (১৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি অডিটরিয়ামে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি আয়োজিত ১৪তম নাফিয়া গাজী আন্তঃবিভাগ বিতর্ক প্রতিযোগিতার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিতর্কের ক্ষেত্রে যুক্তি, নির্ভরযোগ্য তথ্য, প্রাসঙ্গিক উদাহরণ, তথ্য-উপাত্তের সমাহার ঘটিয়ে সুন্দর উপস্থাপনা করতে পারলে তবেই বিতর্কে জয়ী হওয়া যায়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে নিয়োজিত থাকাকালীন নিজের অভিজ্ঞতা এবং বাংলাদেশের জন্য বয়ে আনা সফলতার বর্ণনা দিয়ে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যেগুলো লক্ষ্য ছিল তার সবগুলোই জাতিসংঘের বিভিন্ন রেজ্যুলিউশনে অনুমোদন করা সম্ভব হয়েছিল। এর কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন-এগুলোর পক্ষে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার যখন এসডিজির ১১টি প্রস্তাব পাঠায়, তখন তার সবগুলোই জাতিসংঘের ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাতিসংঘ ডিবেটের কৌশলের উদাহরণ দিয়ে বলেন, বিতর্কের ক্ষেত্রে প্রথমত ভালো ভালো শব্দ ব্যবহার করতে হবে যেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ও উপযুক্ত হয়। আর তথ্য জানতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে তথ্যের ন্যায্যতা প্রমাণ করতে হবে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে- রুলস অব প্রসিডিওর জানতে হবে এবং কখন পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিতে হবে সেটাও জানতে হবে।
বিতর্কের ক্ষেত্রে জ্ঞানার্জনের কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে ড. মোমেন বলেন, জ্ঞানার্জন এমনিতেই হয় না, সেজন্য শ্রম দিতে হয়। পরিশ্রমের কোন বিকল্প নেই। তিনি শিক্ষার্থীদের সাফল্য অর্জনের জন্য সময়ের উপযুক্ত ব্যবহার এবং কঠোর পরিশ্রমের পরামর্শ দেন।
উন্নতবিশ্বে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি অন্যান্য কী কী কর্মকাণ্ড করেছে সেটাও সেখানে দেখা হয় এবং এক্ষেত্রে বিতর্ক একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এছাড়া খেলাধুলা, সাংগঠনিক দক্ষতা এগুলো দেখা হয়। শিক্ষার্থীর বই পড়ার ব্যাপকতা কেমন সেটাও দেখা হয়, এটা শুধু পাঠ্য বই নয়, পাঠ্য বইয়ের বাইরেও অন্যান্য বই পড়ার বিষয়টি মূল্যায়ন করা হয়।
‘বৈচিত্র্যে ধ্বনিত হোক সৌন্দর্যের জয়গান, মৃত্যু উপত্যকার মিছিল পেরিয়ে সড়কে নেমে আসুক জীবনের ঐকতান।’ – এই স্লোগানকে ধারণ করে পরিচালিত এই বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য ছিল নিরাপদ সড়ক ও পরিবহন ব্যবস্থা, লিঙ্গের সমতা এবং সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বৈচিত্র্য ইত্যাদি বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিতর্ক প্রতিযোগিতার উদ্দেশ্য পূরণে সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে গণসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন। সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রচলিত আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত বিতার্কিক ও শিক্ষার্থী নাফিয়া গাজীর স্মরণে ১৯৯২ সাল থেকে ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি এই বিতর্ক আয়োজন করে আসছে। দু’দিন ব্যাপী এবারের প্রতিযোগিতা আয়োজনে সহায়তা করেছে ‘জেন্ডার রেসপন্সিভ রেজিলিয়েন্স এন্ড ইন্টারসেকশনালিটি ইন পলিসি এন্ড প্রাক্টিস (জিআরআরআইপিপি- গ্রিপ) এবং জেন্ডার এন্ড ডিজাস্টার নেটওয়ার্ক (জিডিএন)। দেশি ও বিদেশি ১৬টি দল এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে যার মধ্যে ৯টি বিদেশি ও ৭টি দেশি বিতার্কিক দল অংশ নেয়।
বিতর্ক প্রতিযোগিতায় ইন্টারন্যাশনাল ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারতের আই আই টি এবং রানার আপ হয়েছে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়। ১৪তম নাফিয়া গাজী আন্তঃবিভাগ সংসদীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফাইনাল বিতর্কের প্রস্তাব ছিল, ‘এই সংসদ আদিবাসী নৃগোষ্ঠেী সংস্কৃতিকে পর্যটন বিস্তারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করায় অনুতপ্ত।’ প্রতিযোগিতায় সরকারি দল ছিল- ইন্সটিটিউট অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার এন্ড রিসার্চ। বিতর্কে বিরোধী দল ছিল- নৃবিজ্ঞান বিভাগ। ফলাফল: প্রস্তাবটি গৃহীত হয়। প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয় নৃবিজ্ঞান বিভাগ। ডিবেটার অব দ্য ফাইনাল হন সরকার দলের এস এম ফরহাদ।আর ডিবেটার অব দ্য টুর্নামেন্ট হন জুবায়েদ হোসেন শাহেদ।
ড. মোমেন প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন ও রানারআপ উভয় দলকে শুভেচ্ছা জানিয়ে চ্যাম্পিয়ন, রানারআপ দল ও প্রতিযোগীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মশিউর রহমান। ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি’র সভাপতি শেখ মো. আরমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ও ঢাকা ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি’র চিফ মডারেটর অধ্যাপক ড. মাহবুবা নাসরীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. জিয়া রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট এন্ড ভালনারাবিলিটি স্টাডিজ-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. দিলারা জাহিদ।