বর্তমান সরকার অত্যন্ত কর্তৃত্ববাদী। সবকিছু তারা নিয়ন্ত্রণে নিতে চায়। অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি। তিনি বলেন , শান্তির মিছিল হচ্ছে, কিসের শান্তি? দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের মাঝে শান্তি নেই। মানুষের আয় বাড়ছে না কিন্তু ব্যয় বেড়েই যাচ্ছে। মানুষের মানসম্মান, সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। উৎকণ্ঠার মধ্যে দেশের মানুষ জীবন কাটাচ্ছে। এমন বাস্তবতায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা মানুষের কাছে প্রহসন মনে হয়।
সোমবার(১৩ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয়ে জাতীয় মহিলা পার্টির নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এমনটা জানান।
জিএম কাদের বলেন, দুটি দল দেশের মানুষের জন্য কবরের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করেছে। দেশের মানুষ কবরের শান্তি ও স্থিতিশীলতা চায় না। কারো প্রতিবাদ করার শক্তি বা সাহস নেই। এমন শান্তির জন্য আমরা রাজনীতি করি না। আমরা মানুষের সত্যিকারের শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার জন্য রাজনীতি করছি। আগামী প্রজন্ম যেন সুনাগরিক হিসেবে শান্তিময় পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারে- সরকার এমন শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে পারেনি। শুধু ক্ষমতায় থাকা এটা কোনো রাজনীতি হতে পারে না। ক্ষমতায় আমরা যাব জনগণের কল্যাণে কাজ করার জন্য।
জাতীয় পার্টি এ রাজনীতি জনগণের সামনে তুলে ধরতে চায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনি কর্মকাণ্ড শুরু করেছে। বর্তমান সরকার সংবিধান মোতাবেক গেল নির্বাচনের মতো এবারো একটি নির্বাচন করতে চাচ্ছে। সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিএনপি এ পদ্ধতিতে নির্বাচন চাচ্ছে না, তারা নির্বাচন প্রতিহত করতে চাচ্ছে। এর ফলে দেশে একটা সংঘাতময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। সামনের দিকে আরও খারাপ অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা দুটি দলের মাঝামাঝি অবস্থানে নিজস্বতা নিয়ে রাজনীতি করছি। আমরা দেশের মানুষের সামনে তৃতীয় এবং বিকল্প অপশন সৃষ্টি করেছি। ৯০ সালের পর থেকে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতিতে বিতশ্রদ্ধ। মানুষ একটি পরিবর্তন চাচ্ছে। আমরা শক্তিশালীভাবে সাধারণ মানুষের সামনে বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে চেষ্টা করছি।
নতুন রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, তিনি মাটি ও মানুষের লোক। আশা করছি তিনি দেশ ও জাতির জন্য কাজ করতে পারবেন। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অবদান রেখেছেন। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে থেকে সব দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে সমান চোখে দেখবেন।বিপদে-আপদে সবার পাশে দাঁড়াবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। আমাদের ফলাফল যাই হোক, আমরা আবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। দেশ স্বাধীন হয়েছে দেশের মানুষের জন্য একটি দেশ হবে। দেশের প্রজাদের জন্য একটি দেশ হবে। দেশের মালিক জনগণ, তারা নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন।
তিনি বলেন, জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যদি জনগণের ইচ্ছেমতো দেশ পরিচালনা ব্যর্থ হয় তাহলে দেশের জনগণ আবার নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধি পরিবর্তন করবেন। আমরা মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদদের রক্তের প্রতি সম্মান জানাতে চাই। স্বাধীনতার চেতনা সমুন্নত রাখতেই আমরা অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই।
এ সভায় জাতীয় পার্টি মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, আনুপাতিক হারে জাতীয় নির্বাচন হলেই নির্বাচন নিয়ে সব সমস্যার সমাধান হবে। আনুপাতিক হারে নির্বাচন মানেই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন।
পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ আনুপাতিক হারে নির্বাচনের যে ফর্মুলা দিয়েছিলেন, এখন তা সময়ের দাবি। আনুপাতিক হারে নির্বাচনে কোনো প্রার্থী থাকবেন না, নির্বাচনে শুধু প্রতীক থাকবে। প্রার্থী না থাকলে কেন্দ্র দখল, সন্ত্রাস, পেশিশক্তি বা কালো টাকার ছড়াছড়ি থাকবে না। দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে প্রতীকে ভোট দেবেন। যে দল যত শতাংশ ভোট পাবে, সেই দল থেকে তত শতাংশ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবে।
কর্মমুখী শিক্ষাব্যবস্থা চালু করতে হবে জানিয়ে জাপা মহাসচিব বলেন, প্রতিদিন শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়ছে, কিন্তু বেকারত্ব দূর করতে কোনো উদ্যোগ নেই। আওয়ামী লীগ ভাবছে কিভাবে ক্ষমতা ধরে রেখে আরও লুটপাট করবে। আর বিএনপি চাচ্ছে কেমন করে ক্ষমতায় গিয়ে আবার লুটপাট করবে। দেশের মানুষ আর দুটি দলের লুটপাট দেখতে চায় না। দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির হাত থকে মুক্তি চায়।
মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ও জাতীয় মহিলা পার্টির আহবায়ক অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপির সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
জাতীয় মহিলা পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- জাতীয় মহিলা পার্টির যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমা আখতার এমপি, হেনা খান পন্নি, সদস্য ডা. সেলিমা খান, শাহনাজ পারভীন, ফরিদা ইয়াসমিন, অ্যাডভোকেট লাকী বেগম, আমেনা হাসান, শারমিন পারভীন লিজা, রিতু নূর, জেসমিন নূর প্রিয়াঙ্কা, মিনি খান, মেহেরুন্নেসা হিয়া, আসমা আখতার শিল্পী, শ্রাবণী চাকমা, মনিকা আখতার, জোছনা আক্তার, অধ্যাপিকা বিলকিস সরকার পুতুল, শাহজাদি, জিন্নাত আরা, রোখসানা আখতার শ্যামলী, ফারহানা আইরিন, হাসিনা আখতার শিফা, রুনা বেগম, রোখসানা পারভীন, নাজনীন ও রাইসা।