সাভারের স্বনামধন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সাভার মডেল কলেজের সমকামি শিক্ষক রমজান আলীকে প্রত্যাহার করে তার স্থলে দায়িত্ব পালনকারী মো. আবু সাঈদকে বহাল রাখার দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা। এছাড়া কলেজটির অর্থনীতি বিভাগের শোকজ করা শিক্ষক আসাদুজ্জামান জিমকেও স্বপদে বহাল রাখার দাবি জানিয়েছেন তারা।
রোববার (২৮ আগস্ট) সকালে ক্লাস বর্জন করে এসব দাবি আদায়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন কলেজটির সহস্রাধিক শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, সমকামিতার অভিযোগে বরখাস্তকৃত শিক্ষক রমজান আলীকে দিয়ে ক্লাস করানোর বিষয়ে আমরা প্রতিবাদ করলে কলেজের অন্য শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছেন। তারা আমাদের বাসায় নালিশ করেছে এবং আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে ইতিহাসের শিক্ষক মুস্তাফিজ আমাদের সম্মানহানির কথা বলেছেন। আমরা প্রতিবাদ করায় কলেজ থেকে আমাদেরকে টিসি দেয়ার হুমকি দেয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছে তাকেই কেন আবার কলেজ কর্তৃপক্ষ নিয়ে এসেছেন? এছাড়া আমাদের প্রিয় শিক্ষকদের বের করে দিয়ে রাজনৈতিকভাবে নতুন লোকজনদের নিয়োগ দেয়ার পাঁয়তারা করা হচ্ছে। অন্যদিকে একজন রেপিস্ট যদি কলেজে শিক্ষকতায় ফিরে আসে তাহলে আমরা নিজেদেরকে কীভাবে নিরাপদ মনে করবো। আমাদের কোনো সেফটি নেই। সমকামির আস্থা ভাজন স্যারদের ব্যবহার এত খারাপ যে কলেজে সবার সামনে অপমান করার পর আবার বাসায় বিচার দেওয়া হয়েছে। ওই শিক্ষার্থীর কলেজে আসা বন্ধ হয়ে গেছে।
কলেজটির সহকারী অধ্যাপক মো. মুনসুর আলী বলেন, ২০০৮ সালে ইসমাইল নামে এক শিক্ষার্থী টেস্ট পরীক্ষায় ফেল করায় তাকে বাসায় নিয়ে বলাৎকারের চেষ্টা চালায় কলেজটির শিক্ষক রমজান আলী। পরবর্তীতে ওই শিক্ষার্থী বিষয়টি জানিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে বিচার চেয়ে আবেদন করলে সেটি বোর্ডে পাঠানো। পরবর্তীতে বোর্ড কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্তে ওই ঘটনার সত্যতার পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকজন ছাত্রের সাথে একই ঘটনার ঘটানোর অভিযোগ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত রমজান আলীকে চিঠি দিয়ে তার বক্তব্য জানতে চাই। কিন্তু তিনি কলেজে না এসে নিম্ন আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। আমরা মামলাটির জবাব দেই এবং সে হাজিরা না দেয়ার কারণে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। সে পরবর্তীতে আরও একটি মামলা করেছে যা বর্তমানে সুপ্রিমকোর্টে পেন্ডিং অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম সুপ্রিম কোর্টের দেয়া নির্দেশনা অমান্য করে জৈষ্ঠ্যতা লঙ্ঘন করে সমকামির দোসর রানাকে নিজ ক্ষমতাবলে অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেন। যদিও তা হাইকোর্টের আরেক রায়ে সেটা ব্যর্থ হয়। কয়েক মাসের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফায় আবারও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে সমকামি শিক্ষকের আরেক ঘনিষ্ঠজন দিলারা খানম নামের এক শিক্ষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করেছেন। এই সুযোগে সমকামি রমজান আলী বোর্ডকে ম্যানেজ করে একটা চিঠি নিয়ে এসে কলেজে যোগদান করেছেন। কিন্তু আমরা সে চিঠি দেখিনি। এছাড়া যেহেতু তার দায়ের করা একটি মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে সেটা নিষ্পত্তি হওয়ার আগে কি করে রমজান আলী কলেজে যোগদান করেছেন সেটিও প্রশ্নবিদ্ধ। আজকে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে তাকে প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। যেখানে একজন সমকামী শিক্ষকের কাছে ছাত্ররাই নিরাপদ নয়, সেখানে ছাত্রীরা কীভাবে তার কাছে নিরাপদ এটা আপনাদের কাছে প্রশ্ন রইলো।
জানতে চাইলে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলারা খানম বলেন, আমি সকালে কলেজে আসার পর একটি ক্লাস হয়েছে। পরবর্তীতে দেখি কলেজে স্যার নেই এবং শিক্ষার্থীরা বাইরে ঘুরাঘুরি করছে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যেসব দাবিতে ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ করেছে সে বিষয়টি আমাকে জানায়নি। অন্যদিকে ১৪ বছর আগে এক ছাত্রকে বলাৎকারের অভিযোগে রমজান আলীকে বরখাস্তের বিষয়টি এখন কীভাবে শিক্ষার্থীরা জানলো সেই প্রশ্ন তিনি তোলেন।