সামনের দিনগুলো খুব সুখকর হবে না। আমেরিকা যেভাবে বাংলাদেশের ওপর ভিসানীতি চাপিয়ে দিচ্ছে, সামনে ইকোনমিক স্যাংশন দেওয়ার কথাও আসছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীও সেদিন এ কথা বলেছেন।
গত সোমবার (২৭ নভেম্বর) জোটের মনোনয়ন না পেয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বেসরকারি এক টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, এমপি।
সাবেক সংসদ সদস্য মেনন বলেন, এর বিরুদ্ধে লড়াই যদি করে থাকি আমরাই করেছি, পার্লামেন্টে আমিই বলেছি। পার্লামেন্টের বাইরেও আমরা বিএনপি রুখো, আমেরিকা রুখো, বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাস—আমরাই বলেছি। সুতরাং আওয়ামী লীগ এককভাবে (নির্বাচন) করবে বলে মনে হয় না। কারণ তাদের দলের মধ্যেই এই ব্যাপার নিয়ে ঐক্যবদ্ধতা নেই।
জোটের সঙ্গী তাদের (আওয়ামী লীগ) লাগবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজ হোক, কাল হোক, পরশু হোক লাগবে। জনগণের সঙ্গী যদি বলেন, জনগণের অংশ আমরা, জনগণের অগ্রবর্তী অংশ আমরা। সুতরাং সেই হিসেবে তাদের জোটের সঙ্গী লাগবে।
সব আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা নিয়ে মেনন বলেন, চ্যালেঞ্জ বেশি। যদি বেশি ক্যান্ডিডেট হয় তাহলে ভালো। খারাপ না। বেশি ক্যান্ডিডেট হলে সেন্টারগুলো পাহারা দেওয়া যায়। সবাই তখন নজর রাখে আরকি। আর বেশি ক্যান্ডিডেট না হলে একটু অসুবিধা হয়। চ্যালেঞ্জ তো হবেই। ইলেকশন ইজ এ চ্যালেঞ্জ।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, আমাদের ইলেকশন কমিশন তো বলেছে, তারা নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে। কিন্তু এখনো যেগুলো শুনছি কথা-বার্তা, সেগুলো খুব ভালো কথা-বার্তা শুনছি না বাইরে। যেমন ধরেন নির্বাচন প্রচারের ক্ষেত্রে যখন নির্বাচনী তপশিল ঘোষণা হয়ে যায়, তখন তো আর দলের প্রতীক নিয়ে স্লোগান দিয়ে কেউ নামতে পারে না। কিন্তু এখন তো হরদমই স্লোগান হচ্ছে।
সিইসির অবস্থান নিয়ে রাশেদ খান মেনন বলেন, এটা কীভাবে বৈধতা দেয় আমি এটা বুঝতে পারি না। এটা তার জন্য খুব একটা সমীচীন হয়েছে বলে মনে করি না। এমনিতেই সিইসি সমালোচনার পাত্র হয়ে আছেন। আরও সমালোচনার পাত্র হবেন।
শুধুমাত্র জোটবদ্ধ হলেই কি সুষ্ঠু নির্বাচন হয়—এমন প্রশ্নের জবাবে দ্বিমত পোষণ করেন এই নেতা।
তিনি বলেন, না না, তা কেন বলব। সুষ্ঠু হলে সুষ্ঠু বলব না হলে না। যেমন গতবার ড. কামাল হোসেন সাহেব ২০১৮ সালে ভোট দিয়ে বললেন সুষ্ঠু হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব, তিনি ভোট দিয়ে বললেন সুষ্ঠু হয়েছে। কিন্তু পরে গিয়ে উলটে গেলেন। দুটো তো একসঙ্গে হয় না। এক মুখে দুই কথা হয় না। জোট হলে সুষ্ঠু হবে, জোট না হলে সুষ্ঠু হবে না, আমি এই দ্বিচারী নীতিতে বিশ্বাস করি না।
নির্বাচন কমিশন নিয়ে অস্বস্তির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, কমিশন নিয়ে অস্বস্তি তো আছেই। কারণ তারা একেক সময় একেক কথা বলে। তাদের একেক কমিশনার একেক কথা বলছেন।
জোটগতভাবেই নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি বলেন, আমাদের নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে জোটগতভাবে। এটা আমাদের সিদ্ধান্ত না কেবল, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী তিনি লিখেই ইলেকশন কমিশনকে জানিয়েছেন, জোটগতভাবে নির্বাচন করা হবে।
আওয়ামী লীগ প্রার্থী ঘোষণার পর বিষয়টি নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে মেনন বলেন, না। কথা হলে তো হয়েই যেত। কথা হয়নি। আমরা খালি এটা বলেছি যে, তারা আলাপ করতে চাচ্ছে। তাদের কথা হচ্ছে সাবমিশন করেন, তারপরে আমরা আলোচনা করে দরকার হলে প্রার্থী উইড্রো করে নেব।
প্রার্থী তুলে না নিলে কী করবেন—এ প্রশ্নের জবাবে রাশেদ খান মেনন বলেন, যদি জোটগতভাবে নির্বাচন করতে হয় তাহলে তো উইড্রো করতে হবে। এটা নিয়মই তো। তারা তো স্বতন্ত্র প্রার্থী, বিদ্রোহী প্রার্থী এলাউ করছে।