সেশনজটের কারণে সদ্য ৪৫তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেননি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ২০১৭-১৮ সেশনের ১৮টি বিভাগের শিক্ষার্থী।সরকারি চাকরিসহ অন্যান্য সকল চাকরির বাজার থেকেও পিছিয়ে পড়ছেন তারা। সেশনজটমুক্ত হওয়ায় মাত্র ৪টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা এবার বিসিএস পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পেরেছেন।
সেশনজটে থাকা বিভাগগুলোর মধ্য রয়েছে: বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের- সিএসই, গণিত, রসায়ন, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ। জীব বিজ্ঞান অনুষদের- কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট, প্রাণরসায়ন ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগ। ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের- মার্কেটিং, একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস এবং ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগ। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের- অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও লোক প্রশাসন বিভাগ, কলা ও মানবিক অনুষদের- ইংরেজি ও বাংলা বিভাগ এবং আইন অনুষদের- আইন বিভাগ।
প্রশাসনের ব্যর্থতা, শিক্ষক সংকট, ক্লাসরুম সংকট, পরীক্ষার তারিখ পেছানো, প্রশাসনিক জটিলতা, রাজনীতিতে শিক্ষকদের ব্যস্ততা ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিসহ নানা কারণে এই সেশনজটের সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
বিসিএস দিতে না পারার বিষয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থীর সাথে কথা হলে তারা জানান, আমরা কাকে মনের ব্যথা বলব? সবাই আছেন রাজনীতি নিয়ে। তাদের কি সেশনজট নিয়ে ভাবনার সময় আছে?
নুরুল আমিন (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, “আজকে সেশনজটের কারণে এই পরিস্থিতির জন্য খুব বিষন্ন লাগছে। একদিকে পরিবার, আত্মীয়স্বজন অনেক আশা নিয়ে তাকিয়ে আছেন, অন্যদিকে সেশনজটে পড়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে না পারা সব মিলে একটা বিদঘুটে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে আমার জন্য। বিভাগের শিক্ষক, অনুষদের ডিন আর উপাচার্যের অবহেলাই আজকের এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক শিক্ষার্থী বলেন, “সংকট আর রাশিয়া ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব শুধু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়েই লেগেছে ৷ কিছু বললেই সংকটের কথা বলে। বলে আমরা নবীন বিশ্ববিদ্যালয়৷ সংকট নিয়েই কাজ করতে হবে। তাই আর কিছু বলতে চাই নাহ। এখন রেজাল্টের অপেক্ষায় আছি, বের হলেই সব ঝামেলা শেষ। দেড় বছর আমার জীবন থেকে বাড়তি নিয়েছে এর দায়ভার কে নিবে? আল্লাহ সইবে নাহ!”
এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ার অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শফিউল আলম বলেন,” সেশনজটের মূল যে সমস্যাটা আমাদের তা হলো শিক্ষক সংকট, শ্রেণিকক্ষ সংকট আর ল্যাব সংকট। বিভাগগুলোতে যে অনুপাতে শিক্ষক থাকার প্রয়োজন আসলে সেই অনুপাতে নেই। এজন্য একজন শিক্ষককে অনেকগুলো কোর্সের ক্লাস নিতে হয় যা কঠিন ব্যাপার। দ্বিতীয়ত ল্যাব সংকটের কারণে একটি ব্যাচকে তিন থেকে চারটি ভাগে ভাগ করে ল্যাব পরীক্ষা শেষ করতে হয় যার জন্য দেরি হয়ে যায়।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, “বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এটি আরও গুরুত্বের সাথে দেখতে হবে, কারণ শিক্ষার্থীরা যতদ্রুত তাদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে নিয়োজিত করতে পারবে তাতেই আমাদের সাফল্য। আমরা আগামীতে বিসিএসসহ সকল ধরনের চাকরির পরীক্ষায় সময়মত শিক্ষার্থীরা যেন অংশগ্রহণ করতে পারে সেই বিষয়ে নানাবিধ কর্মপ্রয়াস গ্রহণ করব। লক্ষ্যনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে সেশনজটের বিষয়ে। একাডেমিক কাউন্সিল এবং ডিন ও চেয়ারম্যানদের মিটিংএ বিষয়টি যেন গুরুত্ব পায় সেজন্য সংশ্লিষ্টদের সাথে এই বিষয়ে আমি আলোকপাত করব।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন বলেন, “আমাদের মূল যে সেশনজটটি করোনাকালীন সময় থেকে শুরু হয়েছে। করোনাকালীন এবং এর আগের সেশনজট নিরসনে আমি আগে থেকেই ডিন এবং বিভাগের চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দিয়েছি। এছাড়াও, একাডেমিক কাউন্সিল সভায় ডিন এবং বিভাগের চেয়ারম্যানদের সেশনজট নিরসনে আরো জোরালো নির্দেশ দিব।”