27 C
Dhaka
Saturday, November 9, 2024

১৫ আগস্ট ভোর রাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িটি যেভাবে আক্রান্ত হয় 

- Advertisement -

১৫ আগস্টের কালরাতে শেখ কামালকে হত্যার মধ্য দিয়ে হত্যাযজ্ঞের শুরু আর শেষ হয় শিশু শেখ রাসেলকে হত্যার মধ্য দিয়ে।

সেদিন ভোর রাতের আগেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর আত্মীয় ও মন্ত্রিসভার সদস্য আবদুর রব সেরনিয়াবাতের হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে যান। তখন উপর থেকেই বঙ্গবন্ধু নিচতলায় তার ব্যক্তিগত সহকারি এ এফ এম মহিতুল ইসলামকে টেলিফোন করে বলেন, সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করতে হবে। কিন্তু, পুলিশ কন্ট্রোল রুমে ফোন করেও কোনো সাড়া শব্দ পাননি মহিতুল।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাসায় অবস্থান করা তাঁর ব্যক্তিগত সহকারি আব্দুর রহমান শেখ রমা এভাবেই বর্ণনা দিয়েছেন ১৫ আগস্ট হতাকান্ডের। ভোর রাতে ধানমন্ডির বাড়িটি আক্রান্ত হওয়ার সময় বঙ্গবন্ধু যে ঘরে ছিলেন তাঁর বাইরের বারান্দায় ঘুমিয়েছিলেন শেখ রমা। 

 সেদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ দিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেলসহ পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল।

পৃথিবীর এই ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগ্নে যুবনেতা ও শেখ ফজলুল হক মনি, তার সহধর্মিনী আরজু মনি ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন।

আব্দুর রহমান শেখ রমা ’৬৯ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর পরিবারে কাজ করতেন, ’৭১-এ ওই পরিবারের সঙ্গে ছিলেন এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার দায়ে যে মামলা করা হয় তার দ্বিতীয় সাক্ষী এই রমা।

‘সেদিন ভোর রাতে বাড়িটির দিকে দক্ষিণ দিক থেকে সরাসরি আক্রমণ শুরু হয়। একটু পরেই বঙ্গবন্ধু তার ঘরের দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসেন। বেগম মুজিবের কথায় আমি নিচে নেমে মেইন গেটের বাইরে এসে দেখি সেনাবাহিনীর কিছু সদস্য গুলি করতে করতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে এগুচ্ছে। তখন আমি বাড়ির ভেতরে ফিরে দেখি, লুঙ্গি আর গেঞ্জি পরা অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু নিচতলায় নামছেন’-বলেন রমা। 
পরে রমা দ্রুত দোতলায় গিয়ে দেখেন, বেগম মুজিব আতঙ্কিত অবস্থায় ছোটাছুটি করছেন। রমা সেখানে দাঁড়িয়ে না থেকে তিনতলায় চলে যান এবং শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামালকে ঘুম থেকে ডেকে তোলেন। তখন দ্রুত শার্ট-প্যান্ট পরে নিচতলায় নামেন শেখ কামাল। সুলতানা কামাল চলে যান দোতলায়। পরে শেখ জামাল ও তার স্ত্রীকে ঘুম থেকে ডেকে তুললে তারা দ্রুত জামা-কাপড় পরে বেগম মুজিবের কক্ষে যান।’

রমা বলেন, গোলাগুলির মধ্যে অভ্যর্থনা কক্ষে বঙ্গবন্ধুর সামনেই বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন মহিতুল ইসলাম। পুলিশ কন্ট্রোল রুম ও গণভবন এক্সচেঞ্জে চেষ্টার এক পর্যায়ে রিসিভার নিয়ে বঙ্গবন্ধু নিজেই বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি’। 

বঙ্গবন্ধু তাঁর কথা শেষ করতে পারেননি। একঝাঁক গুলি জানালার কাঁচ ভেঙে অফিসের দেয়ালে লাগে। বঙ্গবন্ধু তখন টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন। এর মধ্যেই গৃহকর্মী আব্দুলকে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর কাছে তাঁর পাঞ্জাবি ও চশমা পাঠিয়ে দেন বেগম মুজিব। কিছুক্ষণ পর গুলিবর্ষণ থেমে গেলে বঙ্গবন্ধু উঠে দাঁড়িয়ে আব্দুলের হাত থেকে পাঞ্জাবি আর চশমা নিয়ে পরেন। নিচতলার এই ঘর থেকে বারান্দায় বের হয়ে বঙ্গবন্ধু পাহারায় থাকা সেনা ও পুলিশ সদস্যদের বলেন, ‘এতো গুলি হচ্ছে, তোমরা কী করছ?’ এ কথা বলেই বঙ্গবন্ধু উপরে চলে যান। 

বঙ্গবন্ধু উপরে উঠতে না উঠতেই শেখ কামাল নিচে নেমে বারান্দায় দাঁড়ান। তখন কোনো কথা না বলেই শেখ কামালের পায়ে গুলি করে বজলুল হুদা। নিজেকে বাঁচাতে লাফ দিয়ে ঘরের মধ্যে গিয়ে পড়েন শেখ কামাল। বলতে থাকেন, ‘আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ এই কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে শেখ কামালকে লক্ষ্য করে বজলুল হুদা তার হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে ব্রাশফায়ার করে। সঙ্গে সঙ্গে মারা যান শেখ কামাল। 

আব্দুর রহমান রমা বলেন, নিচে কী হচ্ছে তার কিছুটা আঁচ করতে পেরে বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকেন। এক পর্যায়ে ফোনে তাঁর সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিনকে পান। তিনি তাকে বলেন, ‘জামিল, তুমি তাড়াতাড়ি আসো। আর্মির লোকরা আমার বাসা অ্যাটাক করেছে। সফিউল্লাহকে ফোর্স পাঠাতে বলো।’
পরে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল সফিউল্লাহকেও ফোন করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি তাকে বলেন, ‘সফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি অ্যাটাক করেছে, কামালকে (শেখ কামাল) বোধ হয় মেরে ফেলেছে। তুমি জলদি  ফোর্স পাঠাও।’ 

এরপর ঘাতকরা গুলি করতে করতে ওপরে চলে যায়। তারা শেখ জামালের ঘরের বাথরুমে আশ্রয় নেয়া গৃহকর্মী আব্দুলকে গুলি করে। হাতে ও পেটে গুলিবিদ্ধ অবস্থাতে তিনি সিঁড়ির পাশে গিয়ে হেলান দিয়ে বসে থাকেন।

বঙ্গবন্ধুর ঘরে তিনি ছাড়াও ছিলেন বেগম মুজিব, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, সুলতানা কামাল, রোজী জামাল। ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর ঘরের বাইরে অবস্থান নেয়। গোলাগুলি থামলে বঙ্গবন্ধু দরজা খুলে বারান্দায় বেরিয়ে আসলেই ঘাতকরা তাকে ঘিরে ধরে। 

মেজর মহিউদ্দিন ও তার সঙ্গের সৈন্যরা বঙ্গবন্ধুকে নিচে নিয়ে যেতে থাকে। এসময় বঙ্গবন্ধু ঘাতকদের কাছে তারা কি চায় এবং বঙ্গবন্ধুকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তা জানতে চান। এ সময় নিচতলা ও দোতলায় সিঁড়ির মাঝামাঝি অবস্থান নেয় বজলুল হুদা ও নূর। বঙ্গবন্ধুকে নিচে নিয়ে আসার সময় নূর কিছু একটা বললে মহিউদ্দিন সরে দাঁড়ায়। সঙ্গে সঙ্গে বজলুল হুদা ও নূর তাদের স্টেনগান দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে গুলি করে। 

রমা জানান, দোতলায় হত্যাযজ্ঞ শেষে শেখ রাসেল এবং তাকে যখন নীচে নিয়ে আসা হয়। তখন রাসেল বলছিলো: ভাইয়া, আমাকে মারবে না তো? এরকম শিশুকে নিশ্চয়ই খুনিরা মারবে না আশায় মুহিতুল ইসলাম তাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলেন: ‘না, ভাইয়া, তোমাকে মারবে না’। পরে রাসেল বলে, ‘আমি মায়ের কাছে যাবো।’

পরে এক হাবিলদার শেখ রাসেলকে তার হাত ধরে দোতলায় নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর দোতলায় গুলি এবং সেখান থেকে কান্নাকাটির আওয়াজ পাওয়া যায়। আর ওই হাবিলদার নীচে গেটের কাছে এসে মেজর আজিজ পাশাকে বলে: ‘স্যার, সব শেষ।’ 

এর আগে আজিজ পাশা এবং রিসালদার মোসলেমউদ্দিন বঙ্গবন্ধুর বেডরুমে বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, শেখ জামাল, শেখ জামালের স্ত্রী এবং শেখ কামালের স্ত্রীকে হত্যা করে। 

- Advertisement -
ফেস দ্যা পিপল লাইভ টক শো উইথ সাইফুর সাগর
Video thumbnail
মোদি-ট্রাম্প বাংলাদেশের কী করতে পারবে? আওয়ামী লীগ লাফালাফি করে লাভ কতটুকু? গোলাম সরোয়ার মিলন
10:40
Video thumbnail
গা’জা যু’দ্ধ নিয়ে ট্রাম্প ও মাহমুদ আব্বাসের মধ্যে যে আলোচনা হল
02:06
Video thumbnail
আসিফ নজরুলকে আ. লীগের হেন'স্থা, রাষ্ট্রীয় প্রটোকল নিয়ে চা'ঞ্চ'ল্যকর মন্তব্য সাবেক মন্ত্রীর
08:55
Video thumbnail
সারাদেশে লু'টপাট ও চাঁ'দাবা'জির অভিযোগ বিএনপির ওপর! এবার দলের পক্ষে যে জবাব দিলেন বিএনপি নেতা বাবুল
11:19
Video thumbnail
শেখ হাসিনার ভ'য়ং'কর অডিও ফাঁ'স! ১০ নভেম্বর ট্রাম্পকে নিয়ে যা করবে আ. লীগ
08:21
Video thumbnail
আসিফ নজরুলকে আঃলীগের হে'ন'স্থা, যে বার্তা দিলেন ড. সিনহা এম এ সাঈদ
08:03
Video thumbnail
আসিফ নজরুলকে হেনস্থা ও নির্বাচন নিয়ে বিএনপির তাড়াহুড়া! যে মা'রাত্মক ভুলের আশ'ঙ্কা করলেন ফারুক হাসান!
10:18
Video thumbnail
সুইজারল্যান্ডে আসিফ নজরুলকে আঃলীগের হে'নস্থা! আঃলীগের চরিত্র নিয়ে ক'ঠোর মন্তব্য বিএনপি নেতা বাবুলের!
11:40
Video thumbnail
আসিফ নজরুলকে আঃলীগের হেনস্থা, কি বার্তা দিচ্ছে? সত্বর নির্বাচন দিতে হবে। বিএনপির কঠোর অবস্থান।
01:16:03
Video thumbnail
এবার বিএনপি-জামায়াতকে নিয়ে ক'ঠো'র মন্তব্য করলেন মেজর জেঃ এ এল এম ফজলুর রহমান!
20:52

সর্বশেষ

আমাদের সাথে সংযুক্ত হোন

1,600,000FansLike
428FollowersFollow
1,270,000SubscribersSubscribe